২০২২ সালের প্রিমিয়াম আয়

কত টাকার হিসাব দেয়নি এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স- পৌনে ৯ কোটি নাকি সাড়ে ১০ কোটি?

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশেষ নিরীক্ষক বলছে ২০২২ সালে এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স ৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা প্রিমিয়াম আয়ের হিসাব গোপন করেছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, কোম্পানিটি প্রিমিয়াম আয় গোপন করেছে ১০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র অনুসন্ধানে এমনটাই তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্র মতে, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের আয়-ব্যয়, ব্যাংক হিসাব পরিচালনাসহ ১০টি খাত খতিয়ে দেখতে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান  শফিক বসাক এন্ড কোং –কে বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগ করে আইডিআরএ। নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান কোম্পানিটির ব্যাংক স্টেটমেন্ট, লেজার এবং ভাউচার পরীক্ষা করে মতামত দেয়- ২০২২ সালে কোম্পানিটি ৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকার প্রিমিয়াম আয়ের হিসাব দেয়নি।

নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের তথ্য মতে, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে একটি করে মোট ৩টি ব্যাংক একাউন্টে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রিমিয়ামের টাকা জমা নেয় এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স।

কোম্পানিটির ব্যাংক স্টেটমেন্টের তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে এসব ব্যাংক একাউন্টে প্রিমিয়াম বাবদ জমা হয় মোট ৬৪ কোটি ৮১ লাখ ৭৯ হাজার ২৬২ টাকা।

এই টাকা থেকে চেক ডিসঅনারের ৩ কোটি ৬০ লাখ ৩ হাজার ২৮০ টাকা, আগের বছরের জমাকৃত প্রিমিয়ামের ৬ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ হাজার ৮০৯ টাকা এবং ইন্টারেস্টের ৪ লাখ ৪৪ হাজার ১৯১ টাকা বাদ দেয়া হলে কোম্পানিটির ব্যাংক একাউন্টে প্রকৃত জমা ৫৪ কোটি ৩০ লাখ ৭৪ হাজার ৯৮২ টাকা।

অথচ বীমা কোম্পানিটির লেজারে মোট প্রিমিয়াম আয়ের হিসাব দেখিয়েছে ৪৫ কোটি ৫৫ লাখ ৬৫ হাজার ২০৮ টাকা।

নিরীক্ষকদের এই হিসাব অনুসারে ২০২২ সালে এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স তাদের প্রিমিয়াম আয় কম দেখিয়েছে ৮ কোটি ৭৫ লাখ ৯ হাজার ৭৭৪ টাকা।

তবে প্রিমিয়াম আয় কম দেখানোর বিষয়ে বীমা কোম্পানিটির দাবি, ব্যাংক একাউন্টগুলোতে জমাকৃত প্রিমিয়ামের মধ্যে ৬ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ হাজার ৮০৯ টাকা আগের বছর ২০২১ সালের।

আর নিরীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ৬ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ হাজার ৮০৯ টাকা ২০২১ সালের প্রিমিয়াম আয় হিসেবে বাদ দিয়েই ২০২২ সালের প্রিমিয়াম আয়ের হিসাবে কোম্পানিটি ৮ কোটি ৭৫ লাখ ৯ হাজার ৭৭৪ টাকা কম দেখিয়েছে।

অপরদিকে এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের ২০২২ সালের আর্থিক প্রতিবেদন, বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদন এবং ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে উল্লেখিত আয়-ব্যয়ের তথ্য পর্যালোচনা করে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি।

এতে দেখা যায়, কোম্পানিটি ২০২২ সালে ১০ কোটি ৫৫ লাখ টাকার বেশি প্রিমিয়ামের তথ্য গোপন করেছে। এই হিসাব করা হয়েছে ২০২২ সালের তৃতীয় ত্রৈমাসিক পর্যন্ত ভ্যাট-স্ট্যাম্প বাবদ পরিশোধিত টাকার হিসাব ধরে।

তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের ৩টি ব্যাংক একাউন্টে প্রিমিয়াম বাবদ মোট জমা হয় ৬৪ কোটি ৮১ লাখ ৭৯ হাজার ২৬২ টাকা। এর মধ্যে চেক ডিসঅনার হয় ৩ কোটি ৬০ লাখ ৩ হাজার ২৮০ টাকা। অর্থাৎ ব্যাংক একাউন্টগুলোতে কোম্পানিটির প্রকৃত জমা ৬১ কোটি ২১ লাখ ৭৫ হাজার ৯৮২ টাকা।

ব্যাংক একাউন্টে জমাকৃত এই টাকা থেকে ভ্যাটের ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮৭ হাজার ৮৮৫ টাকা, স্ট্যাম্প ডিউটির ১ কোটি ২৪ লাখ ৪২ হাজার ৫০৬ টাকা ও ২০২২ সালের প্রিমিয়াম ডিপোজিটের ৭ কোটি ৭০ লাখ ৩৮ হাজার ৭১৬ টাকা বাদ দিয়ে এবং ২০২১ সালের প্রিমিয়াম ডিপোজিটের ১০ কোটি ৪৮ লাখ ৮৮ হাজার ৫৩৬ টাকা যোগ করলে কোম্পানিটির মোট প্রিমিয়াম আয় দাঁড়ায় ৫৮ কোটি ৩০ লাখ ৯৫ হাজার ৪১১ টাকা।

অথচ এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের বার্ষিক প্রতিবেদনে ২০২২ সালে মোট প্রিমিয়াম আয় (ডিরেক্ট বিজনেস) দেখানো হয়েছে, ৪৭ কোটি ৭৫ লাখ ৪৩ হাজার ৫৪৫ টাকা। এই হিসাবে কোম্পানিটি ১০ কোটি ৫৫ লাখ ৫১ হাজার ৮৬৬ টাকার প্রিমিয়াম আয় গোপন করেছে।

এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বদিউজ্জামান লস্করের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে কোম্পানিটির প্রিমিয়াম আয় গোপনের বিষয়ে মতামত চাওয়া হলে তিনি মিটিংয়ে থাকার কথা বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।