ফারইস্ট ইসলামী লাইফের নির্বাহী কমিটির সভায় দুদক মামলার আসামিরা বিশেষ অতিথি, পদক্ষেপ নেই আইডিআরএ’র

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফারইস্ট ইসলামী লাইফের নির্বাহী কমিটির ৫৭৭তম সভায় বিশেষ অতিথি এবং বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কোম্পানিটির অর্থ আত্মসাতে জড়িত দুদক মামলার আসামিদের। অথচ অদৃশ্য কারণে গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষায় অর্থ আত্মসাতকারীদের বিরুদ্ধে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদে থাকা নিয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।

অভিযোগ উঠেছে, ফারইস্ট ইসলামী লাইফের তহবিল আত্মসাৎ মামলার আসামিরা বোর্ডসভাসহ কমিটিগুলোর সভায় অংশ নিয়ে কোম্পানি পরিচালনায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন। ফলে কোম্পানিটির আত্মসাতকৃত ২ হাজার ৮শ’ কোটি টাকার মধ্যে একটি টাকাও অদ্যাবধি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এমনকি নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা সত্ত্বেও সম্পদ বিক্রি করে গ্রাহকের পাওনা ২ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা পরিশোধ করতে পারছে না কোম্পানিটি। যার বিরুপ প্রভাব পড়ছে গোটা বীমা খাতে।

কোম্পানিটির নির্বাহী কমিটির সভার নোটিশ সূত্রে জানা যায়, আজ বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টায় ফারইস্ট ইসলামী লাইফের নির্বাহী কমিটির ৫৭৭তম সভা আয়োজন করা হয়। এ সংক্রান্ত নোটিশ দেয়া হয় গত ১১ সেপ্টেম্বর। কোম্পানিটির  নির্বাহী কমিটি ৪ সদস্যে হলেও নোটিশে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে মোট ৯ জনকে। এর মধ্যে ৩ জন বিশেষ অতিথি এবং ২ জন বিশেষভাবে আমন্ত্রিত।

সভায় নির্বাহী কমিটির সদস্য দুদক মামলার আসামি নাজনীন হোসেন ও বিশেষ অতিথি দুদক মামলার আসামি হেলাল মিয়াকে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ ছাড়াও হেলাল মিয়ার ভাই মোবারক হোসেনকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সভায় উপস্থিত থাকার জন্য। সেই সাথে নাজনীন হোসেনের স্বামী মোশাররফ হোসেকেও বিশেষ অতিথি হিসেবে সভায় উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানানো হয়। এই সভায় সভাপতিত্ব করছেন দুদক মামলার আসামি ডা. মনোয়ার ও ডা. মোজাম্মেল হোসেনের ভাই ডা. মো. মোকাদ্দেস হোসেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোম্পানিটির দুদক মামলার আসামিরা ৫৭৭তম নির্বাহী সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভায় ২৩টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলেও কোম্পানির আত্মসাতকৃত অর্থ উদ্ধার বা গ্রাহকদের দাবি পরিশোধের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি।

কোম্পানি সূত্র মতে, ৩১ জুলাই, ২০২৫ তারিখে ৪৫ কোটি টাকা আত্মসাতের জন্য কোম্পানিটির ১৪ পরিচালকসহ ২৪ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন। মামলা নং- ৩৫, তারিখ ৩১/০৭/২০২৫, সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১। মামলার বাদী সৈয়দ আতাউল কবির, উপপরিচালক দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয়- ঢাকা।

ওই মামলার ২ নম্বর আসামি ফারইস্ট ইসলামী লাইফের সাবেক পরিচালক আলহাজ মো. হেলাল মিয়ার ভাই মো. মোবারক হোসেন কোম্পানির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদে নিরপেক্ষ পরিচালক হিসেবে আছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি মামলার ২ নং আসামি আলহাজ মো. হেলাল মিয়ার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আমানত শাহ সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

বীমাকারীর করপোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইনের পরিচালনা পর্ষদের আচরণবিধি সংক্রান্ত ৬.৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে স্বার্থের দ্বন্দ্ব দেখা দিলে এমন কোন ব্যক্তি বীমা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে থাকতে পারেন না। এই বিধান অনুসারে মো. মোবারক হোসেন মামলার ২ নম্বর আসামি আলহাজ মো. হেলাল মিয়ার ভাই, যা বীমাকারীর করপোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইনের পরিচালনা পর্ষদের আচরণবিধির লঙ্ঘন।

মামলার ৪ নম্বর আসামি নাজনীন হোসেন ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন। ফারইস্টের যেসব জমি ক্রয়ের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়, সেই জমি ক্রয়ের কমিটির চেয়ারম্যানও ছিলেন নাজনীন হোসেন।

ফলে নাজনীন হোসেন ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদে থাকাও বীমাকারীর করপোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইনের পরিচালনা পর্ষদের আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ১৭ সেপ্টেম্বর আয়োজিত ফারইস্ট ইসলামী লাইফের নির্বাহী কমিটির ৫৭৭তম সভায় নাজনীন হোসেনকে উপস্থিত থাকার নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। এই সভায় তার স্বামী মোশারফ হোসেনকেও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

অভিযোগর রয়েছে, নাজনিন হোসেন পরিচালনা পর্ষদে থাকলেও তার স্বামী মোশারফ হোসেন কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে উপস্থিত থাকেন এবং কোম্পানিটির সকল কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণে তিনি ভূমিকা রাখেন। যা বীমা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

দুদকের দায়ের করা এই মামলার ৬ নম্বর আসামি মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ডা. মো. মনোয়ার হোসেন এবং ১১ নম্বর আসামি মোজাম্মেল হোসেন দু’জনই ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ড. মোকাদ্দেস হোসেনের বড় ভাই। যিনি নির্বাহী কমিটির এই সভায় সভাপতিত্ব করছেন। যা বীমাকারীর করপোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইনের পরিচালনা পর্ষদের আচরণবিধি সংক্রান্ত ৬.৫ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন।