পাঁচ বছরেও চূড়ান্ত হয়নি বীমা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা একাডেমি আইন
নিজস্ব প্রতিবেদক: বহু বছর ধরে এক রকম অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে বাংলাদেশ বীমা একাডেমি। বীমা খাতে দক্ষ লোকবল গড়ে তুলতে কোন ভূমিকাই রাখতে পারছে না এ প্রতিষ্ঠানটি। এরই প্রেক্ষিতে সরকার নতুন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বিদ্যমান বীমা একাডেমি বিলুপ্ত করার উদ্যোগ নেয় ২০১৪ সালে। বীমা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা একাডেমি আইন, ২০১৪-এর একটি খসড়াও তৈরি করা হয়। তবে পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হলেও এখন পর্যন্ত এর কোনো অগ্রগতি নেই।
জানা যায়, বীমা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা একাডেমি আইনের খসড়া অনুযায়ী ‘কর্তৃপক্ষ’ বলতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে বোঝানো হয়েছে। এছাড়া ধারা ৩ এর উপধারা (৭) অনুযায়ী অভিজ্ঞ বিদেশী প্রশিক্ষকও একাডেমির প্রশিক্ষক হতে পারবেন এবং একই ধারার উপধারা (৮)-এ প্রস্তাব করা হয়েছে, প্রত্যেক বীমা করপোরেশন/কোম্পানি একাডেমির সদস্য হতে পারবেন। সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো বীমা একাডেমির পরিচালনায় প্রতি বছর একাডেমির তহবিলে চাঁদা প্রদান করবে। যারা সদস্য হবে না, তারা সহযোগী সদস্য হবে এবং বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত হারে প্রতি বছর একাডেমির তহবিলে চাঁদা প্রদান করবে।
জানা যায়, বর্তমানের একাডেমি একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা। তবে তা অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সরাসরি নিয়ন্ত্রণাধীন হওয়ায় স্বাধীনভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
ব্যাংক খাতে জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার জন্য বিআইবিএম গড়ে তোলা হয়েছিল ১৯৭৪ সালে। আর বীমা একাডেমি করা হয়েছিল তারও এক বছর আগে অর্থাৎ ১৯৭৩ সালে। সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা, প্রশিক্ষণ ও ব্যাংকখাতে অবদান রাখার জন্য বিআইবিএম বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে। আর আশানুরূপ অবদান রাখতে না পারার কারণেই বীমা একাডেমিকে বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
জানতে চাইলে একাডেমির পরিচালক ও বোর্ড অব গভর্নরসের সদস্য সচিব মুহাম্মদ আমজাদ হোসাইন ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডিকে বলেন, খসড়া আইনটি সম্পর্কে আমার কিছুই জানা নেই। তাই এ নিয়ে মন্তব্য আমি করতে চাই না। তবে বীমা একাডেমিকে বিলুপ্ত না করে এর আধুনিকায়নের পক্ষে মত প্রকাশ করেন তিনি।
বীমা কোম্পানির মালিকপক্ষের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শেখ কবীর হোসেন বলেন, বীমা খাতে দক্ষ লোকবল তৈরি হলে জিডিপিতে খাতটির অবদান বাড়বে। এজন্য বিআইবিএমের মতো এ খাতটির জন্যও একটি ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা অপরিহার্য।
বর্তমানে বীমা একাডেমি ১০ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব পদাধিকারবলে পর্ষদের চেয়ারম্যান। একাডেমির প্রধান নির্বাহী একজন পরিচালক, যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার যে কর্মকর্তাকে সরকার নিয়োগ দেয়। পর্ষদের অন্য সদস্যরা হচ্ছেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান, সাধারণ বীমা করপোরেশনের (এসবিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), জীবন বীমা করপোরেশনের (জেবিসি) এমডি, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন প্রতিনিধি, বীমা বিষয়ে অভিজ্ঞ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক এবং বিআইএর তিনজন প্রতিনিধি।
নতুন কাঠামোয় ১৩ সদস্যের পর্ষদের প্রস্তাব করা হয়েছে, যার চেয়ারম্যান হবেন পদাধিকারবলে আইডিআরএর চেয়ারম্যান। একাডেমির প্রধান নির্বাহী হবেন মহাপরিচালক। অন্যরা হবেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এসবিসি, জিবিসি, বিআইএ, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদ, বেসরকারি জীবন বীমা কোম্পানি ও বেসরকারি সাধারণ বীমা কোম্পানি থেকে একজন করে প্রতিনিধি। এছাড়া আইডিআরএর একজন সদস্য ও সরকার মনোনীত বীমা বিষয়ে অভিজ্ঞ দুজন ব্যক্তি। একাডেমির শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি একাডেমিক কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাবনাও রয়েছে খসড়া আইনটিতে।