ভুয়া বা জাল বীমা দাবির প্রতিক্রিয়া
এ কে এম এহসানুল হক:
ভুয়া বা জাল দাবি বীমা কোম্পানির জন্য বৈরী বা শত্রুভাবাপন্ন হতে পারে। এটি বীমা কোম্পানির আর্থিক সঙ্কট সৃষ্টিতে সহায়ক হতে পারে। তাছাড়া বীমা কোম্পানির লাভ বা মুনাফা খর্ব করতে পারে অথবা এর ওপর প্রচণ্ড আঘাত হানতে পারে। বিশেষ ক্ষেত্রে এ সমস্যা বীমা কোম্পানির ভরাডুবির কারণও হতে পারে। ভুয়া বা জাল বীমা দাবি শক্ত হাতে দমন বা প্রতিরোধের মাধ্যমে এ ধরণের পরিস্থিতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হতে পারে।
ভুয়া বা জাল বীমা দাবি মূলত বীমা গ্রহীতার অপরাধপ্রবণ মনোবৃত্তির কারণে সৃষ্টি হতে পারে (Moral hazard) । পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বীমা শিল্প প্রায়ই এ ধরণের জালিয়াতির শিকার হচ্ছে।
একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জাল দাবির পরিমাণ ছিল আনুমানিক এক বিলিয়ন ডলার, যার সিংহ ভাগ এসেছে স্বাস্থ্য বীমা খাত থেকে।
বীমা গ্রহীতার ভুয়া বা জাল দাবি উপস্থাপনের একটি অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে অবৈধ বা অন্যায়ভাবে বীমা কোম্পানির নিকট থেকে বীমার টাকা উদ্ধার করা। এ ধরণের কার্যকলাপ অবৈধ এবং অপরাধমূলক, যা আইনত শাস্তি লাভের যোগ্যতা রাখে।
ভুয়া বা জাল দাবি উত্থাপনের পিছনে বিভিন্ন কারণ দায়ি হতে পারে। যেমন; ফ্যাশনজনিত পণ্যসামগ্রী, পোশাক পরিচ্ছদ ক্রেতার কাছে বিক্রির অনুপোযুক্ত বা অচল প্রতীয়মান হওয়া, খাদ্যদ্রব্য এবং ঔষুধের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া, ব্যবসায়ে মন্দাবস্থা/ আর্থিক সঙ্কট ইত্যাদি। এ ধরণের পরিস্থিতিতে অনেক সময় বীমা গ্রহীতা উদ্দেশ্য প্রণোদিত বা ইচ্ছাকৃতভাবে সম্পত্তিতে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে বীমা কোম্পানির নিকট থেকে বীমার টাকা উদ্ধারের অপচেষ্টা করে থাকে (Arson) । প্রকৃত ক্ষতির অধিক মূল্যের দাবি উত্থাপন করাও এক প্রকার জাল বা ভুয়া দাবির পর্যায়ে পরে।
ভুয়া বা জাল দাবি নির্ণয় করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। এটি সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা সম্ভব নয়। তবে বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ভুয়া বা জাল দাবি সংক্রান্ত তথ্য / পরিসংখ্যান / অভিজ্ঞতা নিয়মিত আদান প্রদানের মাধ্যমে এ সমস্যার প্রতিকার বা হ্রাস করা সম্ভব হতে পারে। এ ব্যাপারে বীমা কোম্পানি, বীমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে সদা সতর্ক এবং সজাগ থাকতে হবে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উপরে বর্ণিত পদ্ধতির মাধ্যমে এই সমস্যা প্রতিকারের সুফল পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ বীমা শিল্পও পরীক্ষামূলকভাবে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
লেখক: এ কে এম এহসানুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রিসহ মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। প্রায় চার দশক দুবাইয়ে অবস্থানকালে তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বিভিন্ন বীমা কোম্পানিতে চাকরি করেছেন।
এ সময় তিনি লন্ডন থেকে ফেলো অফ দি চাটার্ড ইন্স্যুরেন্স ইন্সটিটিউট (এফসিআইআই), এসোসিয়েটস অফ দি ইন্সটিটিউট অফ রিস্ক ম্যানেজমেন্ট (এআইআরএম) এবং এসোসিয়েট অফ দি চাটার্ড ইন্সটিটিউট অফ আরবিট্রেটরস (এসিআইআরবি) ডিগ্রি অর্জন করেন।
ইন্স্যুরেন্সের ওপর এ পর্যন্ত লেখকের অনেকগুলো বই প্রকাশিত হয়েছে, যা দেশে এবং বিদেশে সমাদৃত। পেশায় লেখক একজন চাটার্ড ইন্স্যুরার। বর্তমানে তিনি সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় নিয়োজিত।
ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি'র পাঠকদের প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে বীমার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে লিখেছেন এ কে এম এহসানুল হক।