অগ্নিকাণ্ডে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ভূমিকা
এ কে এম এহসানুল হক, এফসিআইআই: ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অগ্নি প্রতিরোধ বা উপশমে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ঝুঁকি সর্বত্র বিরাজমান। ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন এবং দুর্ঘটনার পূর্বে তার প্রতিরোধে সুষ্ঠু ব্যবস্থা গ্রহণ করা বুদ্ধিমানের কাজ বৈকি।
বেশ কয়েক বছর পূর্বে বিদেশে একটি বিশেষ জরিপে অগ্নিকাণ্ডে সংগঠিত হওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে অনির্বাপিত/অর্ধনির্বাপিত সিগারেটকে দায়ি করা হয়েছে। আপাতত দৃষ্টিতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ অগ্নিকাণ্ডের মূল উৎস হচ্ছে অনির্বাপিত সিগারেট বা সিগারেটের শেষাংশ।
দ্বিতীয় বৃহত্তর কারণ হচ্ছে ইলেকট্রিক শর্ট সার্কিট। ত্রুটিপূর্ণ ইলেকট্রিক ওয়ারিং সিস্টেম ওভার লোডিং ইত্যাদি কারণে অহরহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে থাকে। অন্যান্য কারণের মধ্যে ব্যবসা চলাকালীন মন্দাবস্থায় বীমার টাকা উদ্ধারের উদ্দেশ্যে সম্পত্তি মালিকের ইচ্ছাকৃতভাবে অগ্নি সংযোগ করা যা ‘আরসন' এর সমতূল্য।
বিভিন্ন কারণে অগ্নিকাণ্ড সংগঠিত হতে পারে। এ তথা সত্যি যে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অগ্নিকাণ্ড রোধ বা নিবারণের নিশ্চয়তা প্রদান করে না। কিন্তু এই পদ্ধতির মাধ্যমে সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হ্রাস বা উপশম এবং মূল্যবান মানব সম্পদ রক্ষায় সাহায্য করে।
ঝুঁকি গ্রহণের পূর্ব শর্ত হিসেবে সম্পত্তির প্রি-ইন্সপেকশন বীমা কোম্পানির জন্য জরুরি। এছাড়াও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা প্রতিবছর ইলেকট্রিক ওয়ারিং পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
বহির্বিশ্বে বিল্ডিং নির্মাণ কোড কড়াকড়িভাবে প্রয়োগ করা হয়। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ অনমনীয়। পান থেকে চুন খোসবার উপায় নেই। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিশেষ করে আকাশচুম্বী বাণিজ্যিক এবং রেসিডেন্সিয়াল ভবনের জন্য বিশেষভাবে কার্যকরী হতে পারে যেমন-
১. স্প্রিঙ্কলার সিস্টেম প্রতিস্থাপন
২. ফায়ার ডোর বা ফায়ার ওয়াল প্রতিস্থাপন
৩. অগ্নিনির্ণয় এবং অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র প্রতিস্থাপন যেমন- (ক) স্মোক ডিটেকটর, (খ) ফায়ার হোজ রিল (গ) ফায়ার হাইড্রেন্ট (ঘ) অগ্নি নির্বাপন যন্ত্রপাতি ইত্যাদি।
৪. প্রতি ৬ মাস অন্তর অন্তর ফায়ার ড্রিলের ব্যবস্থা
৫. প্রতি বছর অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডার রি-ফিল করা
৬. ফায়ার মার্শাল নিয়োগ করা এবং অগ্নি নির্বাপনে কর্মচারীদের সুষ্ঠু প্রশিক্ষণ প্রদান
৭. ফায়ার এক্সিট ডোর প্রতিস্থাপন (পুশবার সিস্টেম)
অগ্নি প্রতিরোধ, হ্রাসকরণ বা উপশমে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ভূমিকা এবং গুরুত্ব অনস্বীকার্য। ঝুঁকি ব্যবস্থার মূল মন্ত্র হচ্ছে প্রো-অ্যাকটিভ অ্যাপ্রোচ। কথায় বলে ‘রোগ নিরাময়ের চেয়ে রোগ প্রতিরোধ উত্তম’।