জীবন বীমার প্রিমিয়াম নির্ণয়ের বিবেচ্য বিষয়
শিপন ভূঁইয়া: সঠিকভাবে প্রিমিয়াম নির্ধারণের ওপর বীমা প্রতিষ্ঠানের সাফল্য নির্ভর করে। তাই বীমাকারীর জন্য প্রিমিয়াম নির্ধারণের কাজটি অতীব গুরত্বপূর্ণ ও জটিল কাজ হিসেবে বিবেচিত। বীমা চুক্তির প্রিমিয়াম কত হবে তা নিছক অনুমান বা কল্পনা নির্ভর নয়। অনেকগুলো উপাদান রয়েছে যা বীমা প্রিমিয়াম নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে। এসব উপাদানের মধ্যে রয়েছে-
বীমার দাবি: প্রিমিয়ামকে বীমার বিক্রয় মূল্য বলা হয় এবং বিক্রয় মূল্য বীমার ব্যয় মূল্য ও লাভের যোগফলের সমান। ব্যয় মূল্যের অন্যতম উপাদান হচ্ছে মৃত্যু দাবী ও ম্যাচুরিটি পরিশোধ। জীবন বীমা চুক্তিতে দাবির পরিমান যত বেশি হবে তার প্রিমিয়াম হার তত বেশি হবে।
বীমা চুক্তির মেয়াদ: বীমা চুক্তি বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। মেয়াদ যত বেশি হবে প্রিমিয়াম তত কম হবে অথ্যাৎ বীমার মেয়াদের ওপর প্রিমিয়াম কম বেশি হয়ে থাকে। সুতরাং বীমার মেয়াদ প্রিমিয়াম হারকে প্রভাবিত করে।
ঝুঁকির ধরন: ঝুঁকির ধরন বিবেচনা করে বীমা কিস্তি নির্ধারণ করা হয় । ঝুঁকির মাএা বেশি হলে স্বাভাবিকভাবেই প্রিমিয়াম হার বেশি ধার্য করা হয়। আবার ঝুঁকির মাএা কম হলে প্রিমিয়াম কম হারে ধার্য করা হয়। ঝুঁকির ধরন বিবেচনায় কতগুলো বিষয় বিবেচনা করা হয় তা নিম্নরুপ:
বীমাগ্রহীতার বয়স: বীমা গ্রহীতার বয়সের ওপর প্রিমিয়াম নির্ভর করে। বীমাগ্রহীতার বয়স বেশি হলে তার নিকট হতে বেশি প্রিমিয়াম পাবার আশা থাকে না। তাই প্রিমিয়ামের হার বাড়িয়ে দিতে হয়। পক্ষান্তরে বীমাগ্রহীতার বয়স কম হলে অধিক প্রিমিয়াম পাবার আশা থাকে। ফলে প্রিমিয়ামের হার কম হতে পারে।
বীমাকৃত ব্যক্তির পেশা: মানুষের পেশায় যেমন ভিন্নতা রয়েছে তেমনি উক্ত পেশায় ঝুঁকির ও ভিন্নতা রয়েছে। যেসব পেশায় পেশাজনিত রোগের সম্ভাবনা বেশি এবং ঝুঁকিপূর্ণ সেসব ক্ষেএে প্রিমিয়াম হার তুলনামূলকভাবে বেশি ধার্য করা হয়। অন্যদিকে সাধারণ পেশার মানুষদের ঝুঁকির মাএা কম হওয়ায় প্রিমিয়ামের হার ও কম হয়ে থাকে।
স্বাস্থ্যগত অবস্থা: বীমাগ্রহীতার স্বাস্থ্যগত অবস্থা বিবেচনা করে ও প্রিমিয়াম হার কম বেশি হয়ে থাকে। বীমাকৃত ব্যক্তির স্বাস্থ্যগত অবস্থা খারাপ হলে এবং তিনি শারীরিকভাবে দুর্বল হলে বীমা প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকির মাএা বেশি হবে। এ ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম হার বেশি হয়ে থাকে। আবার বীমাকৃত ব্যক্তির স্বাস্থ্য ভালো হলে, দৈহিক গঠন সুঠাম হলে ও শক্তিশালী হলে প্রিমিয়াম হার কম হয়ে থাকে।
বীমাগ্রহীতার পারিবারিক মৃত্যু রেকর্ড: বীমা ঝুঁকি নির্ধারণে বীমাগ্রহীতার পারিবারিক মৃত্যু রেকর্ডও প্রভাব বিস্তার করে। পরিবারের সদস্যদের আয়ুষ্কাল যদি কম হয় ও তাদের মধ্যে বংশগত রোগ যদি চলতে থাকে তবে স্বাভাবিকভাবেই সেখানে ঝুঁকির পরিমান বেশি মনে হয়। এরুপ অবস্থায় প্রিমিয়াম হার বেশি হবে। অন্যদিকে পারিবারিক মৃত্যু রেকর্ড স্বাভাবিক হলে প্রিমিয়াম হার ও কম হবে।
বাসস্থান: বীমাগ্রহীতা যদি উন্নত ও স্বাস্থ্যপ্রদ আবাসিক এলাকায় বাসিন্দা হন তা হলে স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেওয়া হয় ঐসব এলাকায় দুর্ঘটনা কম ঘটে এবং রোগের আশঙ্কা ও কম থাকে। আবার বাসস্থান যদি ঝুঁকিপূর্ণ ,নোংরা ও ঘিঞ্জি পরিবেশ হয় তবে দুর্ঘটনা ও রোগ ব্যাধির আশঙ্কা ও বেশি থাকে। তাই বীমাগ্রহীতার আবাসের ওপর নির্ভর করে প্রিমিয়াম হারের তারতাম্য হতে পারে।
শিক্ষা ও জীবনযাত্রার মান: বীমাগ্রহীতার শিক্ষা এবং জীবন যাপন মানের ওপর ঝুঁকির মাত্রা নির্ভর করে। যেমন বীমাকৃত ব্যক্তি শিক্ষিত ও স্বাস্থ্য সচেতন হলে এবং জীবন যাত্রার মান উন্নত হলে জীবনের ঝুঁকির পরিমান হ্রাস পায়। অন্যদিকে ব্যক্তি অসচেতন হলে এবং অনুন্নত জীবনযাপন করলে স্বাভাবিকভাবেই ঝুঁকির পরিমান বৃদ্ধি করে। এভাবেই জীবনযাএার মানের ওপর নির্ভর করে প্রিমিয়াম কম বেশি হতে পারে।
বীম চুক্তির ধরন: জীবন বীমা প্রধানত দুই প্রকার। মেয়াদি বীমাপএ ও আজীবন বীমা পএ। আজীবন বীমাপএরে প্রিমিয়াম হার কিছুটা কম। কিন্তু মেয়াদি বীমা পএের প্রিমিয়াম তুলনামূলক একটু বেশি। অন্যদিকে মুনাফাসহ বীমাপএে মুনাফাবিহীন বীমাপএ থেকে প্রিমিয়াম বেশি হতে দেখা যায়।
ব্যবস্থাপনা খরচ: বীমার প্রিমিয়াম ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত খরচাদির ওপর ও কিছুটা নির্ভর করে। কেননা, প্রিমিয়াম থেকেই বীমাকারী তার পরিচালনা ব্যয় নির্বাহ করে। সুতরাং পরিচালনা খরচ কম হলে বীমাকারী বীমাগ্রহীতার কাছ থেকে তুলনামূলক কিছুটা কম প্রিমিয়াম নির্ধারন করতে পারে।
লেখক: রিজিওনাল হেড, এলআইসি বাংলাদেশ লিমিটেড।