রিইন্স্যুরেন্স

এ কে এম এহসানুল হক:

রিইন্স্যুরেন্স বা পুনর্বীমা সম্বন্ধে জানার আগে পুনর্বীমার সংজ্ঞা জানা প্রয়োজন। সহজ ভাষায়, বীমার পুনরায় বীমাকরণকে পুনর্বীমা বলা হয়। বীমার একটি মূলনীতি হচ্ছে ঝুঁকি বিস্তার। পুনর্বীমা সে কাজটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন করে থাকে। অভ্যন্তরীণ বা আন্তর্জাতিকভাবে পুনর্বীমার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বিচক্ষণ বীমা কোম্পানী সাধারণত সুপ্রতিষ্ঠিত এবং সুখ্যাতি সম্পন্ন আন্তর্জাতিক পুনর্বীমা কোম্পানীর সহিত পুনর্বীমা ব্যবসা করার ব্যাপারে অধিক সাচ্ছন্দবোধ করে।

একজন বীমাগ্রহীতা যে কারণে তার ঝুঁকির বীমা আবরণ গ্রহণ করে থাকে, অনুরুপভাবে বীমাকারীও তার ঝুঁকির আবরণ গ্রহণ করে থাকে।

পুনর্বীমার উপকারিতা:

পুনর্বীমা নানাভাবে বীমা ব্যবসাকে সহায়তা করে থাকে। যেমন-

১. পুনর্বীমার মাধ্যমে এক দেশ থেকে অন্য দেশে ঝুঁকি বিস্তার করা সম্ভব

২. পুনর্বীমা বীমা বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে

৩. পুনর্বীমা বীমা অবলিখনের সামর্থ বৃদ্ধি করে

৪. পুনর্বীমা আকস্মিক মহা দুর্ঘটনায় সুরক্ষা প্রদান করে।

পুনর্বীমার প্রকারভেদ:

পুনর্বীমা সাধারণত দুই প্রকার হয়ে থাকে। যেমন-

১. ফেকালটিটিভ রিইন্স্যুরেন্স বা ঝুঁকি নির্দিষ্ট পুনর্বীমা এবং

২. ট্রিটি রিইন্স্যুরেন্স বা পুনর্বীমা চুক্তি।

পুনর্বীমা চুক্তির প্রকারভেদ:

পুনর্বীমা চুক্তি সাধারণত দুই প্রকার হয়ে থাকে। যেমন-

১. প্রোপোরশনাল রিইন্স্যুরেন্স ট্রিটি বা সমানুপাতিক পুনর্বীমা চুক্তি এবং

২. নন-প্রোপোরশনাল রিইন্স্যুরেন্স ট্রিটি বা অসমানুপাতিক পুনর্বীমা চুক্তি।

প্রোপোরশনাল রিইন্স্যুরেন্স ট্রিটি বা সমানুপাতিক পুনর্বীমার প্রকারভেদ:

১. সারপ্লাস ট্রিটি বা উদ্ধৃত অংশের পুনর্বীমা এবং

২. কোটা শেয়ার ট্রিটি বা আনুপাতিক অংশের পুনর্বীমা

নন-প্রোপোরশনাল রিইন্স্যুরেন্স ট্রিটি বা অসমানুপাতিক চুক্তির প্রকারভেদ:

নন-প্রোপোরশনাল ট্রিটি বা অসমানুপাতিক পুনর্বীমা বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। যেমন-

১. এক্সেস অফ লস বা প্রাথমিক বীমা কোম্পানী কর্তৃক গৃহিত ক্ষতির উদ্ধৃত অংশের পুনর্বীমা

২. ক্যাটাসট্রফিক এক্সেস অফ লস বা দুর্যোগ পুনর্বীমা

৩. এক্সেস অফ লস রেশিও বা গ্রহণযোগ্য ক্ষতির অনুপাতের অধিক পুনর্বীমা।

পুনর্বীমায় ব্যবহৃত পরিশব্দসমূহ:

১. সেশন: বীমার অংশের প্রকৃত মূল্য যা প্রাথমিক বীমা কোম্পানী পুনর্বীমা কোম্পানীকে প্রদান করে থাকে।

২. সিডান্ট: প্রাথমিক বীমা কোম্পানী যে বা যারা অন্য বীমা কোম্পানীকে বীমার একটি অংশ প্রদান করে থাকে।

৩. সিড: প্রাথমিক বীমা কোম্পানীর পক্ষ থেকে পুনর্বীমা কোম্পানীকে বীমা ব্যবসার প্রদান করা।

৪. রেট্রোসেশন: “পুনর্বীমার পুনর্বীমাকরণকে” রেট্রোসেশন বলা হয়।

মূলত পুনর্বীমা ছাড়া বীমা ব্যবসার বৃদ্ধি বা উন্নতি সম্ভব নয়। এক কথায় পুনর্বীমা বীমার মেরুদণ্ড। বীমা আইন, ২০১০ এ রিইন্স্যুরেন্স ব্রোকার বা পুনর্বীমা দালালের লাইসেন্স প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু জানা মতে, অদ্যাবধি বীমা কর্তৃপক্ষ কোন দেশীয় কোম্পানীকে এ লাইসেন্স প্রদান করা হয়নি। কতিপয় বিদেশী কোম্পানী এর সুযোগ নিয়ে বাৎসরিক একটি মোটা অংকের টাকা রিইন্স্যুরেন্স ব্রোকারেজ হিসেবে আয় করছে, যার সিংহ ভাগ দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। বিলম্বে হলেও বীমা কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। দেশী কোম্পানীকে রিইন্স্যুরেন্স ব্রোকিং লাইন্সেস ইস্যুর মাধ্যমে বীমা কর্তৃপক্ষকে দেশের টাকা দেশে রাখার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে।

লেখক: এ কে এম এহসানুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রিসহ মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। প্রায় চার দশক দুবাইয়ে অবস্থানকালে তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বিভিন্ন বীমা কোম্পানিতে চাকরি করেছেন।

এ সময় তিনি লন্ডন থেকে ফেলো অফ দি চাটার্ড ইন্স্যুরেন্স ইন্সটিটিউট (এফসিআইআই), এসোসিয়েটস অফ দি ইন্সটিটিউট অফ রিস্ক ম্যানেজমেন্ট (এআইআরএম) এবং এসোসিয়েট অফ দি চাটার্ড ইন্সটিটিউট অফ আরবিট্রেটরস (এসিআইআরবি) ডিগ্রি অর্জন করেন।

ইন্স্যুরেন্সের ওপর এ পর্যন্ত লেখকের অনেকগুলো বই প্রকাশিত হয়েছে, যা দেশে এবং বিদেশে সমাদৃত। পেশায় লেখক একজন চাটার্ড ইন্স্যুরার। বর্তমানে তিনি সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় নিয়োজিত।

ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি'র পাঠকদের প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে বীমার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে লিখেছেন এ কে এম এহসানুল হক।