পলিসি বিক্রয়ে জীবন বীমা কোম্পানির অভিনব কৌশল

এ কে এম এহসানুল হক:

অধিকাংশ জীবন বীমা কোম্পানি পলিসি বিক্রয়ের ব্যাপারে এক অভিনব পন্থার আশ্রয় নিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে বীমা এজেন্ট বা বীমা প্রতিনিধি অসাধু এবং অনৈতিকভাবে পলিসি বিক্রয় করছে।

নিম্নে বর্ণিত কতিপয় দৃষ্টান্ত থেকে ব্যাপারটি পরিস্কার হয়ে যাবে।

প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে যে সাধারণ বীমা বিশেষ করে সম্পত্তি বীমা, বীমার একটি অন্যতম মতবাদ ইনডেমনিটি দ্বারা পরিচালিত অর্থাৎ সম্পত্তির ক্ষতির বেলায় ক্ষতিপূরণ কেবল প্রকৃত ক্ষতির উপর নির্ভরশীল।

নির্দিষ্ট কোন সম্পত্তির উপর একাধিক বীমার ক্ষেত্রে ক্ষতির বেলায় প্রত্যেক বীমা কোম্পানি কেবলমাত্র স্ব-স্ব অংশের সমপরিমাণ টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে বাধ্য থাকবে।

দৃষ্টান্তস্বরূপ ১ কোটি টাকার সম্পত্তি বীমায় দুই বীমা কোম্পানি সমানভাবে অংশ গ্রহণ করলে, ১০ লাখ টাকা ক্ষতির বেলায় প্রত্যেক কোম্পানি শতকরা ৫০ ভাগ হিসাবে অর্থাৎ ৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে।

কিন্তু জীবন বীমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। জীবন বীমা পলিসিকে ‘বেনিফিট’ পলিসিও বলা হয়। অর্থাৎ একজন বীমা গ্রহীতার যথেষ্ট পরিমাণ উপার্জন এবং প্রিমিয়াম প্রদানের সামর্থ্য থাকলে সে ব্যক্তি তার জীবনের উপর একাধিক পলিসি ক্রয় করতে পারে। পলিসি চলাকালে বীমা গ্রহিতার মৃত্যু ঘটলে তার নমিনী বা পরিবার প্রত্যেক পলিসিতে বর্ণিত বীমার টাকার শতকরা ১০০ ভাগ টাকা পাবে।

দৃষ্টান্তস্বরূপ বীমা গ্রহীতা কোম্পানি ‘ক’ এর নিকট থেকে ৫ লাখ টাকার পলিসি এবং কোম্পানি ‘খ’ এর নিকট থেকে সমপরিমাণ টাকার পলিসি ক্রয় অর্থাৎ সর্বমোট ১০ লাখ টাকার পলিসি ক্রয় করলে, বীমা গ্রহীতার মৃত্যুকালে তার নমিনী প্রত্যেক কোম্পানির নিকট বীমাকৃত টাকা অর্থাৎ ৫ লাখ টাকা করে মোট ১০ লাখ টাকা পাবে।

জীবন বীমার বেলায় বীমা এজেন্টের যে কথা মনে রাখতে হবে তা হচ্ছে বীমা প্রস্তাবকারীর পেশা, আয়ের উৎস, আর্থিক স্বচ্ছলতা এবং প্রিমিয়াম প্রদানের সামর্থ্য বা ক্ষমতা।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাস্তবে তা ঘটছে না। দৃষ্টান্তস্বরূপ ২২ বছরের তরুণ যে আর্থিকভাবে পিতার উপর নির্ভরশীল তার কাছে কোম্পানিতে চাকরি এবং নানা রকম প্রলোভন দেখিয়ে ছল চাতুরী করে ২ কোটি টাকার পলিসি বিক্রয় করার কোন যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যাবে না।

কোন কোন ক্ষেত্রে প্রস্তাবকারীর মেডিকেল পরীক্ষার পরিবর্তে তৃতীয় কোন ব্যক্তির মেডিকেল পরীক্ষার রির্পোট গ্রহণের মাধ্যমে পলিসি ইস্যু করা কিছু কিছু বীমা কোম্পানির জন্য এক প্রকার অভ্যাসে দাঁড়িয়েছে।

এছাড়াও রয়েছে অন্যান্য অনিয়ম যেমন- পলিসির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর বছরের পর বছর বীমার টাকা পরিশোধ না করা, বীমা গ্রহীতার মৃত্যুর পর নানা রকম অজুহাত দেখিয়ে সময়মত নমিনীকে টাকা পরিশোধ না করা ইত্যাদি।

আশা করি বীমা কর্তৃপক্ষ উপরোক্ত বিষয়গুলো গভীরভাবে পরীক্ষা করে দেখবেন এবং এ ব্যাপারে দোষী কোম্পানির বিরুদ্ধে কঠিন এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বীমা গ্রাহকের স্বার্থ সংরক্ষণে সচেষ্ট হবেন।

লেখক: এ কে এম এহসানুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রিসহ মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। প্রায় চার দশক দুবাইয়ে অবস্থানকালে তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বিভিন্ন বীমা কোম্পানিতে চাকরি করেছেন।

এ সময় তিনি লন্ডন থেকে ফেলো অফ দি চাটার্ড ইন্স্যুরেন্স ইন্সটিটিউট (এফসিআইআই), এসোসিয়েটস অফ দি ইন্সটিটিউট অফ রিস্ক ম্যানেজমেন্ট (এআইআরএম) এবং এসোসিয়েট অফ দি চাটার্ড ইন্সটিটিউট অফ আরবিট্রেটরস (এসিআইআরবি) ডিগ্রি অর্জন করেন।

ইন্স্যুরেন্সের ওপর এ পর্যন্ত লেখকের অনেকগুলো বই প্রকাশিত হয়েছে, যা দেশে এবং বিদেশে সমাদৃত। পেশায় লেখক একজন চাটার্ড ইন্স্যুরার। বর্তমানে তিনি সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় নিয়োজিত।

ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি'র পাঠকদের প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে বীমার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে লিখেছেন এ কে এম এহসানুল হক।