জালিয়াতি করে পলিসিতে মালামালের নাম পরিবর্তন

বীমা দাবি না দেয়ায় নোয়াখালীতে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক: জালিয়াতির মাধ্যমে বীমাকৃত মালামালের নাম পরিবর্তন করে বীমা দাবি না দেয়ার অভিযোগে সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স এবং মেঘনা ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন নোয়াখালীর এক গ্রাহক। গত মঙ্গলবার নোয়াখালী ৩নং সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দণ্ডবিধি ৪০৬, ৪৬৮, ৪৭১, ৪২০ ও ১০৯ ধারায় এ মামলা করা হয়। মামলা নং- ৬৮১। বাদীর অভিযোগ আমলে নিয়ে সিআইডি কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক মাসফিকুল হক । এ তথ্য জানিয়েছেন বাদীর আইনজীবী অ্যাডভেোকেট মোঃ আবুল কাশেম।

এ মামলায় সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবু তাহের চৌধুরী, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো: জাহিদ আনোয়ার খান, ব্রাঞ্চ কন্ট্রোল বিভাগের ফিরোজা আখতারসহ মেঘনা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ চেয়ারম্যান এইচএন আশিকুর রহমান, বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: আদিল ইসলাম, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: নূরুল আমিন এবং ব্যাংকটির ছয়ানি শাখার তৎকালীন ম্যানেজার মো: মাইনুর আলম চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, জানিয়েছেন বাদী নূর উদ্দিনের আইনজীবী।

অভিযোগ সম্পর্কে আইনজীবী বলেন, বীমা গ্রাহক নূর উদ্দিন ব্যাংক থেকে ঋণ নেন হার্ডওয়্যার ও স্যানেটারী মালামালের ওপর।  বীমাও করা হয় এসব মালের ওপরই। কিন্তু বীমা দাবি উত্থাপন করা হলে বীমা কোম্পানি থেকে জানানো হয় বীমা করা হয়েছে টিভি ফ্রিজের ওপর। পরবর্তীতে দেখায় পলিসির কভার নোট পরিবর্তন করে হার্ডওয়ার ও সেনেটারি মালামালের পরিবর্তে টিভি ফ্রিজের পলিসি করা হয়েছে। ব্যাংক ও বীমা কোম্পানি উভয় যোগসাজসে জালিয়াতির মাধ্যমে এ কভার নোটটি পরিবর্তন করেছে। 

অন্যদিকে আইন অনুসারে বীমা করার দায়িত্ব ব্যাংকের। পলিসি করাই হয় যাতে করে ব্যাংকের ঋণটি ঝুঁকি মুক্ত থাকে। অর্থাৎ ঋণকৃত মালামালের কোন ক্ষতি হলে যাতে বীমা কোম্পানি থেকে তার ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়। তাই যেসব মালামালের ওপর ঋণ মঞ্জুর করা হয় সেসব মালামালের ওপরই বীমা করা হয়। এর বাইরে অন্যকোন মালামালের ওপর বীমা করার কোন সুযোগ নেই।

২০১৬ সালের জুন মাসে মেঘনা ব্যাংক ছয়ানি শাখা থেকে ৭৫ লাখ টাকা ‍ঋণ নেন রাজগঞ্জ বাজারের হার্ডওয়্যার ও স্যানেটারী ব্যবসায়ী মেসার্স নূর হার্ডওয়্যার এন্ড স্যানেটারীর মালিক নূর উদ্দিন। হার্ডওয়্যার ও সেনেটারী মালামালের স্টকের জন্য এ ঋণ মঞ্জুর করে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

শর্তানুসারে নিজ দায়িত্বে এ ঋণের টাকার ঝুঁকি গ্রহণের জন্য সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সঙ্গে ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বীমা অংকের অগ্নিবীমা পলিসি করে ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক শাখার তৎকালীন ম্যানেজার মাইনুর আলম চৌধুরী। এ পলিসির ঝুঁকি গ্রহণ পত্র বা কাভার নোট নম্বর ০০৮০-০৬-২০১৬। এই কভার নোটের ফটোকপি ঋণ গ্রহীতা নূর উদ্দীনকে দেয়া হয় যাতে হার্ডওয়্যার ও স্যানেটারী মালামালের ঝুঁকি গ্রহণের কথা বলা রয়েছে।

এ বীমা পলিসির মেয়াদকালে ২৫ ডিসেম্বর রাতে আগুন লেগে ঋণ গ্রহীতা মো. নূর উদ্দীনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বাজারের অন্যান্য দোকানপাট পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

এরপর সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শাখা ম্যানেজার মাইনুর আলম চৌধুরীর মাধ্যমে বীমাকারী সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের কাছে বীমা দাবি তোলে নূর উদ্দীন। ক্ষয়-ক্ষতি নিরুপনে নিয়োজিত জরীপকারীর জরীপকালে বীমা গ্রাহক নূর উদ্দীনের অগ্নিবীমা পলিসির অন্য একটি কাভার নোট উপস্থাপন করে সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স। এ কাভার নোট নম্বর ০০৯৯-০৯-২০০৬।  এ কাভার নোটে মালামালের বিবরণ দেয়া হয় ফ্রিজ, টিভি এবং এসি।

অথচ ফ্রিজ, টিভি এবং এসি নূর উদ্দীনের দোকানে ছিল না ও আগুনে পোড়েনি। তাই হার্ডওয়্যার ও স্যানেটারী মালামাল আগুনে পুড়লেও তা বীমা করা না থাকায় বীমা দাবিটি নাকচ করে দেয় সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স।

মাননীয় আদালত মামলার তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন সিআইডি’কে। মামলাটি সম্পূর্ণ ডকুমেন্ট ভিত্তিক।  সিআইডি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সংগ্রহ করবে। 

এ বিষয়ে বাদী নূর উদ্দিন বলেন, ব্যবসা বাড়ানোর জন্য মেঘনা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলাম। দোকানে আগুন লেগে সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমি পথে বসে গেছি।  আমার দোকানের হার্ডওয়্যার ও সেনেটারী মালামাল তো বীমা করা ছিল। ব্যাংক ম্যানেজার নিজ দায়িত্বে বীমা করেছে। আমাকে কাভার নোটের ফটোকপি দিয়েছে। আশা ছিল বীমার টাকা পেলে ঋণ শোধ করতে পারবো।

ব্যাংক আর বীমা কোম্পানি মিলে প্রতারণা, জালিয়াতি করে ভূয়া কাভার নোট দেখিয়ে আমার বীমা দাবিটি নাকচ করে দিয়েছে। আমি তো হার্ডওয়্যার ও সেনেটারীর ব্যবসা করি। হার্ডওয়্যার ও সেনেটারী মালামালের স্টকের জন্য ঋণ নিয়েছি। তারা টিভি, এসি ফ্রিজ কোথায় পেল। ব্যাংক আর বীমা কোম্পানির কর্মকর্তারা আমার সঙ্গে প্রতারণা করে জালিয়াতির কাভার নোট বানিয়ে আমার বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে। আশা করি আদালতে ন্যায় বিচার পাবো।