বিআইপিডি’র সেমিনার

আইডিআরএ’র নাম সংশোধন ও ইন্স্যুরেন্স কমিশন গঠনের প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথিরিটি (আইডিআরএ)’র নাম সংশোধন করে ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথিরিটি অব বাংলাদেশ করার প্রস্তাব দিয়েছেন কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য মো. কুদ্দুস খান। একইসঙ্গে ইন্স্যুরেন্স কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেন তিনি।

বৃহস্পতিবার বিআইপিডি ও বিআইএ আয়োজিত সেমিনারে তিনি এ প্রস্তাব করেন। সেমিনারের আলোচ্য বিষয় “কীভাবে বীমা শিল্পের ভাবমূর্তি বাড়ানো যায়”। দেশি-বিদেশি আলোচক এবং দেশের লাইফ ও নন-লাইফের শতাধিক কর্মকর্তা এতে অংশ নেন।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’র সাবেক এ সদস্য বলেন, আইডিআরএ’র স্বাধীনভাবে কাজ করার সব সীমাবদ্ধতা দূর করতে হবে। এর সদস্য হওয়ার জন্য বীমা সংক্রান্ত যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন। বীমাখাতে অভিজ্ঞ হিসেবে কোম্পানিগুলোর মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের আইডিআরএ’র সদস্য হওয়ার সুযোগ রাখতে হবে।

কুদ্দুস খান বলেন, আইডিআরএ’র রুলস অব বিজনেস থাকতে হবে। এটি না থাকায় আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান ইচ্ছামতো বিভিন্ন বিষয় অনুমোদন দিয়ে থাকেন। অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তির দাবি করে তিনি বলেন, বীমা আইনে শাস্তির কথা বলা আছে কিন্তু পুরস্কারের কথা বলা নেই।

সরকারকে ইন্স্যুরেন্স কমিশন গঠনের আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের সহযোগিতা ছাড়া বীমার উন্নয়ন সম্ভব নয়। এজন্য বীমা সংক্রান্ত গবেষণা ও উন্নয়ন সেল গঠন করতে হবে। তার মতে, জাতীয় বীমা নীতির বিষয়গুলো দেখভাল করার জন্য খুব শিগগিরই ইন্স্যুরেন্স কমিশন গঠন করা প্রয়োজন।

মোহাম্মদ সোহরাব উদ্দিন একচ্যুয়ারি বলেন, বীমাখাতে যোগ্যতাসম্পন্ন জনবল দরকার। কিন্তু বীমা িকোম্পানিগুলো নিয়োগ দেয়ার সময় যোগ্যতাসম্পন্ন লোক চায় না। তিনি বলেন, আর কতদিন নিজেদের লোক দিয়ে বীমা কোম্পানি চালাবেন, এখন যোগ্যতাসম্পন্ন লোকদের নিয়োগ দেন।

একচ্যুয়ারিয়াল প্রফেশন ডেভেলপ করার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানান মোহাম্মদ সোহরাব উদ্দিন। তিনি বলেন, একচ্যুয়ারির বেজ প্রোগ্রাম চালু করা দরকার। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যারা এ বিষয়ে পড়ালেখা করবে তাদের প্রয়োজনীয় বেতন-ভাতা দিতে চায় না বীমাকারীরা।

ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা জামাল মো. আবু নাসের মর্টালিটি ও মর্বিডিটি টেবিল তৈরির আহবান জানান। তিনি বলেন, এখন হেলথ ইন্স্যুরেন্সের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। অথচ পলিসিটি কিসের ওপর ভিত্তি করে ডিজাইন করা হবে তা সুনির্দিষ্ট নয়।

বাংলাদেশে মানুষের আয়ুষ্কাল বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষকে বীমা কাভারেজ দেয়া হয় না। অথচ দেশে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ছে। কাজেই বয়স্কদেরকেও বীমার আওতায় আনতে নতুন বীমা প্রোডাক্ট চালু করা প্রয়োজন।

বীমা কোম্পানিগুলো প্রতিশ্রুতি বিক্রি করে উল্লেখ করে ইন্স্যুরেন্স ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়া’র প্রফেসর জর্জ ই থমাস বলেন, বীমা কোম্পানিগুলোকে গ্রাহকের পূর্ণ দাবি পরিশোধ করতে হবে। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ হওয়ায় এখানে পুনর্বীমার গুরুত্ব অনেক বেশি।  

প্রগতি লাইফের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জালালুল আজিম বীমাখাতের ইমেজ বাড়াতে এজেন্টের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, একজন গ্রাহককে বীমা সম্পর্কে জানাতে একজন শিক্ষকের ভূমিকা পালন করতে হবে। বীমার সঠিক চিত্র তুলে ধরতে তাকে একজন কনসালটেন্টের ভূমিকাও পালন করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, গ্রাহকের অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বীমা পলিসি বাছাইয়ে এজেন্টকে সহযোগিতা করতে হবে। গ্রাহকের সঙ্গে সার্বক্ষণিক সম্পর্ক রাখতে হবে। এতে করে বীমা সম্পর্কে গ্রাহকের ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে।

গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা চৌধুরী বলেন, বীমা সম্পর্কিত সেমিনারের মতো কর্মসূচিতে শুধুমাত্র বীমা সংশ্লিষ্টরাই উপস্থিত থাকেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ কিংবা গ্রাহকেরা উপস্থিত থাকে না। এতে করে বীমা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।

তিনি বলেন, বীমার সচেতনতা বাড়াতে আমাদের অন্য পন্থা অবলম্বন করতে হবে। ভিন্ন উপায়ে পলিসি বিক্রি করতে হবে। তরুণদেরকে বীমাশিল্পে যুক্ত করার পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্কুল থেকেই শিক্ষার্থীদের বীমা বিষয়ে শিক্ষাদানের প্রস্তাব করেন ফারজানা চৌধুরী।