চরম সঙ্কটের মুখোমুখী পরিশোধিত মূলধন

এ কে এম এহসানুল হক:

বীমা আইন অনুযায়ী সাধারণ বীমা এবং জীবন বীমার বর্তমান পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ যথাক্রমে ৪০ কোটি এবং ৩০ কোটি টাকা। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও এ কথা সত্য যে মোট ৭৮টি বীমা কোম্পানির প্রায় অর্ধেকই এ আইন ভঙ্গ করে চলেছে। বিশেষ করে জীবন বীমাখাতে অসংখ্য কোম্পানি মারাত্মক আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে। বীমা শিল্পের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিকখাতে এ ধরণের বিপর্যয় স্বাভাবিকভাবে জনমনে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বহির্বিশ্ব এমনকি এশিয়ার বিভিন্ন দেশের তুলনায় বাংলাদেশের বীমাখাতে পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ অপর্যাপ্ত। বীমাখাতকে শক্তিশালী করে তুলতে হলে এবং বীমা গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষার্থে বর্তমান পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ দ্বিগুণ করা প্রয়োজন।

বীমাখাতের একটি বৃহৎ অংশ আর্থিক সংকটে হাবুডুবু খাচ্ছে যা এর ভিত্তি প্রস্তর নাড়া দিয়েছে। আর্থিকভাবে দুর্বল কোম্পানির অস্তিত্ব বিপন্নের মুখে। এই পরিস্থিতিতে বীমা গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষা করা আদৌ সম্ভব কিনা তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।

এ ব্যাপারে বলতে গেলে বীমা কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। বীমা আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা এবং বীমা কর্তৃপক্ষকে অগ্রাহ্য করে কোন কিছুর পরোয়ানা না করে বীমা কোম্পানি নিজেদের খেয়ালখুশী মতো ব্যবসা করে যাচ্ছে।

পরিস্থিতি কতটা ভয়ঙ্কর পর্যায়ে পৌঁছেছে তা নিম্নে বর্ণিত পরিসংখ্যান থেকে সহজেই অনুমেয়।

ক) সাধারণ বীমা কোম্পানি (নির্ধারিত পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৪০ কোটি টাকা):

বীমা কোম্পানিগুলো কর্তৃক আইডিআরএ প্রদত্ত ২০১৮ সালের প্রথম প্রান্তিকের পরিসংখ্যান অনুসারে পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সে ২৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সে ৩৫ কোটি ২ লাখ টাকা, সেনাকল্যাণ ইন্স্যুরেন্সে ২৪ কোটি টাকা, সিকদার ইন্স্যুরেন্সে ২৪ কোটি টাকা, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সে ৩৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্সে ৬ কোটি টাকা, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সে ৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।

এ ছাড়াও তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্সে ৩৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সে ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সে ৩৫ কোটি ৩ লাখ টাকা, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সে ২৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বিডিতে ৩৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, জনতা ইন্স্যুরেন্সে ৩৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, মেঘনা ইন্স্যুরেন্সে ৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা, নিটল ইন্স্যুরেন্সে ৩৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা এবং প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সে ২৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা মূলধন রয়েছে।

খ) জীবন বীমা কোম্পানি (নির্ধারিত পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৩০ কোটি টাকা):

বীমা কোম্পানিগুলো কর্তৃক আইডিআরএ প্রদত্ত ২০১৮ সালের প্রথম প্রান্তিকের পরিসংখ্যান অনুসারে পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ আলফা ইসলামী লাইফে ১৮ কোটি টাকা, বায়রা লাইফে ৩ কোটি টাকা, বেস্ট লাইফে ১৮ কোটি টাকা, চার্টার্ড লাইফে ১৮ কোটি টাকা, ডায়মন্ড লাইফে ১৮ কোটি টাকা, গোল্ডেন লাইফে ৩ কোটি টাকা, গার্ডিয়ান লাইফে ১৮ কোটি ২০ লাখ টাকা, হোমল্যান্ড লাইফে ৩ কোটি টাকা, যমুনা লাইফে ১৮ কোটি টাকা, মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফে ১৮ কোটি টাকা।

এ ছাড়াও এনআরবি গ্লোবাল লাইফে ১৮ কোটি টাকা, প্রগতি লাইফে ১২ কোটি ১৩ লাখ টাকা, প্রগ্রেসিভ লাইফে ১২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, প্রটেক্টিভ ইসলামী লাইফে ১৮ কোটি টাকা, রূপালী লাইফে ২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, সোনালী লাইফে ১৮ কোটি টাকা, সানলাইফে ২০ কোটি ৯০ লাখ টাকা, সানফ্লাওয়ার লাইফে ৩ কোটি টাকা, স্বদেশ লাইফে ১৮ কোটি টাকা, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফে ১৮ কোটি টাকা এবং জেনিথ ইসলামী লাইফে ১৮ কোটি টাকা।

লেখক: এ কে এম এহসানুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রিসহ মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। প্রায় চার দশক দুবাইয়ে অবস্থানকালে তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বিভিন্ন বীমা কোম্পানিতে চাকরি করেছেন।

এ সময় তিনি লন্ডন থেকে ফেলো অফ দি চাটার্ড ইন্স্যুরেন্স ইন্সটিটিউট (এফসিআইআই), এসোসিয়েটস অফ দি ইন্সটিটিউট অফ রিস্ক ম্যানেজমেন্ট (এআইআরএম) এবং এসোসিয়েট অফ দি চাটার্ড ইন্সটিটিউট অফ আরবিট্রেটরস (এসিআইআরবি) ডিগ্রি অর্জন করেন।

ইন্স্যুরেন্সের ওপর এ পর্যন্ত লেখকের অনেকগুলো বই প্রকাশিত হয়েছে, যা দেশে এবং বিদেশে সমাদৃত। পেশায় লেখক একজন চাটার্ড ইন্স্যুরার। বর্তমানে তিনি সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় নিয়োজিত।

ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি'র পাঠকদের প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে বীমার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে লিখেছেন এ কে এম এহসানুল হক।