মেয়াদ উত্তীর্ণ দাবি এবং জীবন বীমার ভূমিকা
এ কে এম এহসানুল হক: পলিসির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার সাথে সাথে বীমা গ্রাহককে বীমার টাকা পরিশোধ করা আইনগতভাবে দায়বদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু জীবন বীমা কোম্পানিগুলো এ ব্যাপারে কি সচেতন?
এ ব্যাপারে বেশিরভাগ বীমা কোম্পানির ব্যর্থতা বীমা আইন লঙঘন ছাড়াও বীমাগ্রহীতার আর্থিক দুঃখ-কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
এ ব্যাপারে বীমা আইন- ২০১০ এর ৭২ ধারায় সুনির্দিষ্টভাবে দাবি পরিশোধের সর্বোচ্চ সময়সীমা ৯০ দিন বেঁধে দেয়া হয়েছে ।
ধারাটিতে বলা হয়েছে, “বীমাকারী কর্তৃক ইস্যুকৃত পলিসির অধীন অর্থ প্রদেয় হয় এবং দাবী প্রদানের জন্য সমস্ত কাগজপত্র দাবীদার কর্তৃক দাখিল করা হইয়াছে এইরূপ ক্ষেত্রে বীমাকারী যদি দাবী পরিশোধের প্রাপ্য হওয়া বা দাবীদার কর্তৃক সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা পূরণের, যাহা পরে সংঘটিত হয়, ৯০ (নব্বই) দিনের মধ্যে দাবী পরিশোধে ব্যর্থ হয় তাহা হইলে উপ-ধারা (২) এ নির্ধারিত সুদ পরিশোধ করিবে, যদি না এইরূপ ব্যর্থতা তাহার নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত ছিল বলিয়া প্রমাণ করিতে পারে।"
কিন্তু জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অহরহ যেসব অভিযোগ আসছে তা হচ্ছে, অনেক বীমা কোম্পানিই এ ব্যাপারে তাদের দায়িত্ব সময়মতো পালন করছে না। এমনও অভিযোগ আছে যে, কোনো কোনো কোম্পানি আইনের তোয়াক্কা না করে বীমা গ্রাহকদের সময়মতো দাবি পরিশোধ করছে না।
বীমা গ্রাহকের জীবন বীমা পলিসি ক্রয় করার উদ্দেশ্য প্রধানত দু'টি। প্রথমটি হচ্ছে জীবনের ঝুঁকি আবরণ আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে বাধ্যতামূলকভাবে সঞ্চয় করা।
পলিসির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর বীমা গ্রাহক সময়মতো তার সঞ্চিত অর্থ হাতে না পেলে বীমা করার উদ্দেশ্য পরাজিত হতে বাধ্য। বীমা কোম্পানির এ কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, বীমা গ্রহীতার টাকা তাদের কাছে আমানত হিসেবে গচ্ছিত থাকে। যা বরখেলাপ করা আইনত অপরাধযোগ্য কাজের সামিল।
বাস্তবে যা ঘটছে তার চিত্রটা হচ্ছে এ রকম যে, মেয়াদ উত্তীর্ণের পর দেশজুড়ে অসংখ্য বীমা গ্রহীতার টাকা সময়মতো পরিশোধ না করে তা বিনিয়োগ করছে এবং তার মুনাফা তারা পকেটস্থ করছে, যা দুর্নীতির সামিল। প্রকৃতপক্ষে এই অর্জিত মুনাফার দাবিদার বীমা গ্রহীতা, বীমা কোম্পানি নয়!
আশা করি, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বীমা গ্রাহকদের স্বার্থে ব্যাপারটি তদন্ত করবে এবং দোষী বীমা কোম্পানির বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কুণ্ঠাবোধ করবে না।
লেখক: এ কে এম এহসানুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রিসহ মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। প্রায় চার দশক দুবাইয়ে অবস্থানকালে তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বিভিন্ন বীমা কোম্পানিতে চাকরি করেছেন।
এ সময় তিনি লন্ডন থেকে ফেলো অফ দি চাটার্ড ইন্স্যুরেন্স ইন্সটিটিউট (এফসিআইআই), এসোসিয়েটস অফ দি ইন্সটিটিউট অফ রিস্ক ম্যানেজমেন্ট (এআইআরএম) এবং এসোসিয়েট অফ দি চাটার্ড ইন্সটিটিউট অফ আরবিট্রেটরস (এসিআইআরবি) ডিগ্রি অর্জন করেন।
ইন্স্যুরেন্সের ওপর এ পর্যন্ত লেখকের অনেকগুলো বই প্রকাশিত হয়েছে, যা দেশে এবং বিদেশে সমাদৃত। পেশায় লেখক একজন চাটার্ড ইন্স্যুরার। বর্তমানে তিনি সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় নিয়োজিত।
ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি'র পাঠকদের প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে বীমার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে লিখেছেন এ কে এম এহসানুল হক।