বীমার বিপণনে ভারতীয় স্টাইল
ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক: সামাজিক মাধ্যমে বীমা বিপণনে নতুন স্টাইল এনেছে ভারতের বীমা কোম্পানিগুলো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বার্তা দিয়ে চলছে বীমার প্রচারণা। সময়ের প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরণের ঝুঁকি থেকে আত্মরক্ষার বিভিন্ন কৌশল শিক্ষা থেকে বোঝানো হচ্ছে বীমা ঠিক এ ধরণের আত্মরক্ষার সহায়ক। যার অন্তর্নিহীত ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে জীবনের ঝুঁকি মোকাবেলায় বীমাই কার্যকর কৌশল।
এছাড়া, বাবা দিবস, হলি উৎসব, ভালোবাসা দিবসের মতো আবেগঘন বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করেও ভিডিও কনটেন্ট, কার্টুন, পোস্টার ইত্যাদি তৈরি করে চলছে বীমা কোম্পানিগুলোর প্রচারাভিযান। কোম্পানিগুলোর এসব প্রচারণা তরুণদের ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট করছে।
সম্প্রতি কয়েকটি কোম্পানি বীমা বিপণনে ইস্যু ভিত্তিক প্রচারাভিযান চালিয়েছে। কোম্পানিগুলোর এসব প্রচারণা জনগণের মাঝে গুঞ্জণ সৃষ্টি করেছে। বীমা সম্পর্কে সচেতন হচ্ছে মানুষ। বীমা পলিসি ক্রয়েও তাদের আগ্রহ বাড়ছে। এমন উদ্যোগ গ্রহণকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে, রিলায়েন্স জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, টাটা এআইএ লাইফ ইন্স্যুরেন্স, এইচডিএফসি লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং এসবিআই লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, টেলিভিশন, রোড শো'র মাধ্যমে এসব প্রচারাভিযানে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখছে বীমা কোম্পানিগুলো। এসব প্রচারণায় সরাসরি কোন প্রডাক্টের বিজ্ঞাপন বা ব্র্যান্ডিং চালানো হয় না। তবে বীমা সম্পর্কে বার্তা থাকে এসব প্রচারাভিযানে। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোতে রিলায়েন্স জেনারেল'র হলি ক্যাম্পেইন, টাটা এআইএ'র লাভ আনকন্ডিশনালি ক্যাম্পেইন, এইচডিএফসি লাইফ'র সুপার হিরো কমিক ক্যাম্পেইন এবং এসবিআই লাইফ'র ফাদার ডে ক্যাম্পেইন এর খবর স্থান করে নিয়েছে।
রিলায়েন্স জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের হলি ক্যাম্পেইন: চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে হলি ক্যাম্পেইন শুরু করে রিলায়েন্স জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। ভারতের জনপ্রিয় উৎসব হলি (রং এর উৎসব) উদযাপনকালে নারীর নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করাই এ প্রচারাভিযানের লক্ষ্য। হলি উদযাপনকালে নারীদের অস্বস্তিকর বা অপ্রীতিকর বিভিন্ন অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখে প্রচারাভিযানটি সাজানো হয়। হলি উৎসবের নামে এসময় নারীদের সঙ্গে বিভিন্ন ধরণের অন্যায় আচরণ সংঘটিত হয়ে থাকে।
নারীর জন্য নিরাপদ উৎসবের আহবান জানানো হয় হলি ক্যাম্পেইনে। শিরোনাম দেয়া হয়ে "হলি নট হলিগানিজম"। রিলায়েন্স জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের প্রত্যাশা- এই পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ব্যক্তি পর্যায়ে নারীরা সম্মানিত হবে এবং মুক্তভাবে তারা হলি উৎসব উদযাপন করতে পারবে।
বীমা কোম্পানিটির সিইও রাকেশ জেইন জানিয়েছেন, হলি হচ্ছে ভারতের সবচেয়ে সুন্দর উৎসব। কারণ এটি স্বাধীনতার চেতনা বহন করে। কিন্তু উৎসবটি এখন নারী হয়রানীর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং নারীর ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মাধ্যমে নষ্ট হয়েছে সুন্দর এই উৎসব। সচেতনতা বৃদ্ধিতে আমাদের এই প্রচারাভিযান ক্ষুদ্র প্রয়াসমাত্র এবং নারীর নিরাপত্তায় বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে আমাদের অনেকগুলো পদক্ষেপেরই একটি।
টাটা এআইএ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের লাভ অনকন্ডিশনালি ক্যাম্পেইন: যদি আপনি কাউকে নিঃশর্তভাবে ভালোবাসেন, তাহলে চিরদিন তার সুরক্ষা চাইবেন। এই দৃষ্টিকোন থেকেই চলতি বছরের শুরুতে লাভ আনকন্ডিশনালী বা শর্তহীন ভালোবাসা নামে নিউ ব্র্যান্ড ক্যাম্পেইন শুরু করে টাটা এআইএ। এই ফিল্ম ক্যাম্পেইনে সুরক্ষার গুরুত্ব এবং দায়িত্ব, যা ক্রেতা তার প্রিয়জনের জন্য চায় সেটা তুলে ধরা হয়েছে।
ফিল্মটিতে একজন নারী বিভিন্ন সময় আকস্মিক হামলার শিকার হন এবং তা প্রতিহত করেন। ওই নারীর স্বামী তাকে এ প্রতিরক্ষার প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। প্রশিক্ষণ দিতে গিয়ে ওই নারীর অনেক ঘুষির আঘাত সহ্য করতে হয় তার স্বামীকে, যা তার শর্তহীন ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। এর উদ্দেশ্যে হলো- যেকোন পরিস্থিতিতে স্বামী পাশে না থাকলেও যেন ওই নারী তার নিরাপত্ত নিশ্চিত করতে পারেন।
টাটা এআইএ লাইফ ইন্স্যুরেন্স নিরাপত্তার এ বিষয়টিকে সামনে রেখে তাদের প্রোডাক্ট ডিজাইন করে থাকে। তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য গ্রাহকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এরপর পিওর প্রটেকশনকে গুরুত্বরোপ করা। এ বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে বীমা কোম্পানিটির তৈরি করা ভিডিওটি অনলাইনে প্রকাশের পর খুব অল্প সময়ের মধ্যে ২০ লাখের বেশি ভিউ হয়। এতে করে বীমা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ছে বলে মনে করে টাটা এআইএ লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
এইচডিএফসি লাইফ'র সুপার হিরো কমিক ক্যাম্পেইন: অন্যদিকে ভারতের তরুণ প্রজন্মকে বীমার গুরুত্ব সম্পর্কে প্রশিক্ষিত করতে ক্যাপ্টেন লাইফ নামে কমিক স্ট্রিপ এবং সুপার হিরো চরিত্র সৃষ্টি করেছে এইচডিএফসি লাইফ ইন্স্যুরেন্স। যাতে দেখা যায় হিরো অন্যদের সুরক্ষা প্রদান করছে। কোম্পানিটির লক্ষ্য ছিল ক্যাপ্টেন লাইফ'র মাধ্যমে লাইফ বীমা সম্পর্কে ধারণা পাল্টানো। যাতে করে তরুণ প্রজন্ম তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে এবং তাদের প্রিয়জনের আর্থিক নিরাপত্তা সম্পর্কে চিন্তাভাবনা শুরু করে। গত ফেব্রুয়ারিতে ক্যাম্পেইন শুরুর পর ব্যাপক সারা পেয়েছে এইচডিএফসি লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
এসবিআই লাইফ'র ফাদার'র ডে ক্যাম্পেইন: ২০১৫ সালের জুনে বাবা দিবসে একটি প্রচারাভিযান শুরু করে এসবিআই লাইফ ইন্স্যুরেন্স। যাতে শ্রোতাদের আহবান জানানো হয় বাবার সঙ্গে কাটানো তাদের স্মৃতিময় মুহুর্তগুলো শেয়ার করার জন্য। হ্যাসট্যাগ #পাপাহেইননা ব্যবহারের মাধ্যমে এটা প্রকাশ করতে বলা হয়। ক্যাম্পেইনে ১২৫টি বিষয় জমা হয়, সেখান থেকে বাছাইকৃত ঘটনাটিকে ব্যবহার করে ভিডিও তৈরি করা হয়। ভিডিওটি ২০১৬ সালের বাবা দিবসে ইউটিউব চ্যানেল এবং ফেসবুকে প্রকাশ করে এসবিআই লাইফ।
আবেগ জড়িত ওই মিউজিক ভিডিওতে বাবা ও সন্তানের সম্পর্ককে তুলে ধরা হয়। এর মাধ্যমে বীমা কোম্পানিটির সার্বিক যোগাযোগকেও তুলে ধরা হয়। ভিডিওটি প্রকাশের পর ইউটিউবে ১২ লাখের বেশি ভিউ হয় এবং ফেসবুকে ৭ হাজার ১৫০ ইন্টারেকশন হয়। ভিডিওতে ব্যবহৃত গানটি সামাজিক মাধ্যমে শ্রোতাদের দ্বারা ব্যপকভাবে সমাদৃত হয়। টুইটে ৩ কোটি ৫ লাখের বেশি ইমপ্রেশন এবং ২ হাজার ৯১২'র বেশি কনভারসেশন হয়, যেটি জাতীয় প্রবণতার নেতৃত্বে দেয়।