বীমা থাকলে ক্যান্সারকে অর্ধেক জয় করা যায়
পাপলু রহমান: ক্যান্সার একটি মরণব্যাধি। এর চিকিৎসাও অনেক ব্যয়বহুল। ভারতের ইনস্টিটিউট অব পপুলেশন সায়েন্সেস'র একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য পাঁচজন রোগীর মধ্যে দু'জনকে সম্পদ বিক্রি এবং ঋণ নিতে হয়।
সম্প্রতি এডেলওয়েস টোকিও লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রকাশিত আরেকটি গবেষণায় জানা গেছে, ক্যান্সারে আক্রান্ত অর্ধেক রোগীরই কোনো বীমা পলিসি নেই। প্রায় ৫০ শতাংশ রোগী তাদের চিকিৎসার জন্য পকেটের টাকা খরচ করে।
গবেষণার জরিপে অংশ নেয়া ১০০ জন টিউমার বিশেষজ্ঞের মধ্যে ৯২ শতাংশ বিশ্বাস করেন, বেশিরভাগ রোগী আর্থিক সংকটে পড়ে চিকিৎসা প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেন। গবেষণায় আরও বলা হয়, প্রায় ৭৫ শতাংশ রোগীই জানেন না যে তারা কীভাবে তাদের ক্যান্সার চিকিৎসার খরচ যোগাবেন।
অ্যাডেলওয়েস টোকিওর এমডি ও সিইও সুমিত রায় বলেন, ক্যান্সার রোগে ঠিক কতো খরচ হবে তা বলা কঠিন। ক্যান্সারের উন্নত চিকিৎসা ব্যয়বহুল। বেশিরভাগ রোগীর পক্ষে তা যোগানো সম্ভব নয়।
এডেলওয়েস টোকিও মনে করে, প্রাথমিক পর্যায়ে উন্নত ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য প্রায় সাড়ে চার লাখ রুপি এবং মধ্যম পর্যায়ে প্রায় ছয় লাখ রুপি প্রয়োজন। ফলে একজন রোগীর উন্নত থেরাপি বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক বোঝা বেড়ে যায়। সব ধরনের ক্যান্সার থেরাপির প্রাথমিক পর্যায়ে (২য় ও ৩য় ধাপে) প্রায় ১০ লাখ রুপি ও মধ্যম পর্যায়ে ১৪ লাখ রুপি গুণতে হয়।
বীমা কোম্পানি ট্রার্টমিন্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা আনন্দ প্রভুদেসাই বলেন, ক্যান্সার চিকিৎসার সরঞ্জাম ও ওষুধ খুবই ব্যয়বহুল। ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যয়বহুলের এটিই প্রধান কারণ। একটি ক্যান্সার হাসপাতাল স্থাপনের জন্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে এবং প্রত্যেক চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানি করতে হয়।
ক্যান্সার চিকিৎসার কেমোথেরাপিতেই সাড়ে ৬৩ হাজার রুপি থেকে দেড় লাখ রুপি, ব্রেস্ট ক্যান্সার সার্জারিতে ১ কোটি ৯ লাখ রুপি থেকে ৪ কোটি ২৫ লাখ রুপি, প্রস্টেট ক্যান্স্যার সার্জারিতে ৩ কোটি ৪৯ লাখ রুপি থেকে ৬ কোটি ৩৫ লাখ রুপি খরচ পড়ে।
এসব চিকিৎসার একাধিক কোর্স ও চক্র রয়েছে। ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রতিটি কোর্সের জন্য ৭৫ হাজার রুপির ওষুধ কিনতে হয় এবং কিনডি ও ফুসফুসের জন্য ওষুধের জন্য খরচ করতে হয় এক লাখ রুপি।
এডেলওয়েস টোকিও গবেষণায় বেশিরভাগ চিকিৎসক বিশ্বাস করেন, আগামী পাঁচ বছরে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। বেশিরভাগ ক্যান্সার রোগীর টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে এবং চিকিৎসা খরচও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, স্তন, সার্ভিকাল, ওরাল, ফুসফুস ও কোলোরেকটাল ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ৪৭ শতাংশ রোগী চিকিৎসা প্রক্রিয়ার মধ্যেই মারা যান।
প্রভুদেসাই বলেন, যে কোনো রোগের চিকিৎসার খরচ যোগানোর জন্য পরিকল্পনা নিতে হয়। বিশেষ করে ক্যান্সার রোগের জন্য গভীরভাবে আর্থিক পরিকল্পনার প্রয়োজন।
এক্ষেত্রে বীমা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্বাস্থ্য বীমা কেবল রোগ নির্ণয় কিংবা চিকিৎসা খরচ যোগাতে সাহায্য করে না, এটি সম্পদ বিক্রি ও ঋণ করা থেকে দূরে রাখে।
বর্তমানে গুরুতর অসুস্থতা বীমা পলিসি ও ক্যান্সার বীমা পলিসির মাধ্যমে ক্যান্সার রোগীদের জন্য বীমা কভারেজ সরবরাহ করতে পারেন। এই বীমা করার ফলে ৬০ লাখ রুপি পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা পাওয়া যেতে পারে। স্ট্যান্ডার্ড হেলথ ইন্স্যুরেন্স পলিসির মাধ্যমেও ক্যান্সার রোগীরা চিকিৎসা সেবা নিতে পারে, কিন্তু এই পলিসি চিকিৎসার পুরো খরচ বহন করে না।
সুমিত রায় বলেন, কঠিন রোগবিসুখে ভারতে বীমা নিয়ে সচেতনতা কম। ক্যান্সারের মতো রোগের খরচ যোগাতে অনেকেই ঋণ করে, জমিজমা বিক্রি করে। তবুও বীমা করে না।