পরিশোধিত মূলধন কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকায় উন্নীত করা প্রয়োজন: এ কে এম এহসানুল হক
নিজস্ব প্রতিবেদক: বীমা খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং গ্রাহকদের স্বার্থ যথাযথ সংরেক্ষণের লক্ষ্যে বীমা আইন, ২০১০ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে আইনটির বিভিন্ন ধারায় সংশোধন, সংযোজন ও বিয়োজনের খসড়া প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।
খসড়া সংশোধনী প্রস্তাবে বীমা কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ বৃদ্ধি বা হ্রাসের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআএ)’কে। যেখানে বর্তমান আইনে পরিশোধিত মূলধন নির্ধারণের ক্ষমতা রয়েছে সরকারের হাতে। তবে পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধির কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি সংশোধনীতে।
বর্তমান বীমা আইন, ২০১০ এর তফসিল-১ এর ধারা ১ অনুসারে- লাইফ বীমা কোম্পানির ক্ষেত্রে নূন্যতম পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৩০ কোটি টাকা এবং নন-লাইফ বীমা কোম্পানির ক্ষেত্রে নূন্যতম পরিশোধিত মূলধন ৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের অংশ থাকে ৬০ শতাংশ এবং বাকী ৪০ শতাংশ সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের।
এক্ষেত্রে লাইফ বীমা কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের নূন্যতম পরিশোধিত মূলধন ১৮ কোটি টাকা এবং নন-লাইফ বীমার উদ্যোক্তা পরিচালকদের পরিশোধিত মূলধন ২৪ কোটি টাকা।
বর্তমানে বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যবসার ভলিউম এবং লায়াবিলিটির তুলনায় পরিশোধিত মূলধনের এই পরিমাণ খুবই কম বলে মনে করছেন বীমা বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, দীর্ঘদিন আগে নির্ধারিত এই পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ এখন বাড়ানো সময়ের দাবি।
এক্ষেত্রে লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকায় উন্নীত করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স প্রফেশনালস সোসাইটি (বিআইপিএস)’র জেনারেল সেক্রেটারি এ কে এম এহসানুল হক, এফসিআইআই।
ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, বর্তমান বীমা আইনে নির্ধারিত বীমা কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ অন্যান্য দেশের তুলনায় যথেষ্ট নয়। এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া জরুরি।
এ কে এম এহসানুল হক বলেন, লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানির প্রত্যেকের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকা থাকা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে পরিশোধিত মূলধনের অর্থ সাধারণত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে জমা বা গচ্ছিত রাখা হয়।
কিন্তু অদ্ভুতভাবে বর্তমান বীমা আইনে পরিশোধিত মূলধন থেকে বীমা কোম্পানি প্রতিষ্ঠার সময় প্রাথমিক ব্যয় নির্বাহের জন্য ৪ কোটি টাকা ব্যবহারের সুযোগ বা বিধান রাখা হয়েছে।
বাস্তবতা হচ্ছে- এমনও দৃষ্টান্ত রয়েছে যে, বীমা কোম্পানি তার পরিশোধিত মূলধন থেকে প্রাথমিক ব্যয় নির্বাহের জন্য ৪ কোটি টাকা উত্তোলনের পর আরো অন্তত ৩ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে।
অর্থাৎ পরিশোধিত মূলধনের টাকা দায়মুক্তভাবে দেশের কোন তফসিলী ব্যাংকে কোম্পানির নামে জমা করার বিধান থাকলেও এই টাকার প্রায় ৩৯ শতাংশ (৭ কোটি টাকা) পর্যন্ত খরচ করেছে বীমা কোম্পানি।
অথচ আন্তর্জাতিক চর্চা অনুসারে, পরিশোধিত মূলধনের টাকা কেবলমাত্র তখনই ফেরতযোগ্য বা ব্যবহারযোগ্য হয় যখন কোন বীমা কোম্পানি ব্যবসা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় এবং তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিতভাবে জানায় অথবা বীমা কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করা হয়।
প্রকৃতপক্ষে পরিশোধিত মূলধনের টাকায় বীমা কোম্পানির হাত দেয়ার বা এই টাকা ব্যবহারের কোন সুযোগ নেই বলে জানান বীমা বিশেষজ্ঞ এ কে এম এহসানুল হক।