দেশি-বিদেশি ৫ উৎস থেকে অর্থের যোগান

বীমা কোম্পানি পুনর্গঠনে তহবিল গঠনের প্রস্তাব রেজল্যুশন অধ্যাদেশে

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের আর্থিক খাতের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বীমা খাতের বিভিন্ন আইন ও বিধি-বিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কাজের অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরইমধ্যে বীমা আইন ও কর্তৃপক্ষ আইনসহ বেশ কিছু বিধি-বিধানের প্রস্তাবিত সংশোধনের বিষয়ে জনমত গ্রহণ শুরু হয়েছে। প্রণয়ন করা হচ্ছে নতুন একটি অধ্যাদেশ।

‘বীমাকারীর রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’ নামের নতুন এই অধ্যাদেশের খসড়া এরইমধ্যে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। আগামী ২০ জুলাইয়ের মধ্যে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজন, বিশেষজ্ঞ, জনসাধারণের সুচিন্তিত মতামত আহবান করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।

প্রস্তাবিত নতুন এই অধ্যাদেশে ‘বীমাকারী পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিল’ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। অধ্যাদেশটির ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, রেজল্যুশনের উদ্দেশ্য অর্জন এবং এই অধ্যাদেশের অধীন রেজল্যুশন ব্যবস্থার কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য কর্তৃপক্ষ বীমা পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিল নামে একটি তহবিল প্রতিষ্ঠা করবে।

এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের একটি পৃথক হিসাবের মাধ্যমে এই তহবিল পরিচালিত হবে; কর্তৃপক্ষের অন্যান্য তহবিল হতে এই তহবিল পৃথক ও স্বতন্ত্র হবে এবং কর্তৃপক্ষের দায়-সম্পদের অন্তর্ভুক্ত হবে না। বীমা পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিলের অর্থ নিরাপদ বিনিয়োগের কৌশল হিসেবে সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা যাবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে।

যেসব উৎস থেকে অর্থের যোগান আসবে তহবিলে:

বীমা পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিলে ৫টি উৎস থেকে প্রাপ্ত অর্থ জমা হওয়ার কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের ১৭(৫) ধারায়।

এর মধ্যে রয়েছে- সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ঋণ ও অনুদান; আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও উন্নয়ন অংশীদারগণের সরবরাহকৃত অনুদান বা ঋণ; বীমা পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিলের বিনিয়োগ হতে প্রাপ্ত আয় ও মুনাফা; বীমাকারীসমূহ হতে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত হারে ধার্যকৃত চাঁদা; এবং অন্য কোনো উৎস হতে প্রাপ্ত অর্থ।

এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বলতে- আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ), ইন্টারন্যাশনাল বীমা ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইবিআরডি), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) এবং অনুরূপ প্রতিষ্ঠানও অন্তর্ভুক্ত হবে।

তহবিল পরিচালনায় প্রবিধান প্রণয়ন:

বীমা পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিল পরিচালনার লক্ষ্যে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় প্রবিধান প্রণয়ণ করতে পারবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের ১৭ (৪) ধারায়।

এতে বলা হয়েছে, বীমা পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিল ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা, ও তত্ত্বাবধান; বীমা পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিলের সাধারণ প্রশাসন সম্পর্কিত নীতি প্রণয়ন; এবং ধারা ৩৭ অনুসারে বীমা পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিল হতে বীমাকারীসমূহের রেজল্যুশন কার্যক্রমের অর্থায়নে অবদান রাখাসহ অন্যান্য বিষয়ে প্রবিধান প্রণয়ন করতে পারবে কর্তৃপক্ষ।

তহবিলের অর্থ ব্যবহার করা যাবে যেসব খাতে:

বীমা পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের বিষয়ে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের ৩৭ ধারায় বলা হয়েছে, উপ-ধারা (২) এর বিধান সাপেক্ষে, কর্তৃপক্ষ বীমা পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিলের মাধ্যমে কোনো বীমাকারীর রেজল্যুশন প্রক্রিয়ার অর্থায়ন করতে পারবে।

তহবিলের অর্থ ব্যবহারে দু’টি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। প্রথমত- এরূপ আর্থিক সহায়তা আর্থিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার ওপর গুরুতর বিরূপ প্রভাব এড়াতে প্রয়োজনীয় হলে; এবং বেসরকারি উৎস হতে প্রাপ্ত বিকল্প তহবিল নিঃশেষ হলে অথবা এরূপ উৎসসমূহ যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত বা সহজলভ্য না হলে।

এক্ষেত্রে ৩টি উদ্দেশ্য পূরণকল্পে তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের কথা বলা হয়েছে।

সেগুলো হলো- (ক) কোনো বীমাকারীর রেজল্যুশন প্রক্রিয়ার সমর্থন; (খ) এই অধ্যাদেশের ধারা ৪০ এর অধীন শেয়ার ধারক এবং পাওনাদারের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা; অথবা (গ) দফা (ক) বা (খ)-তে উল্লেখিত উদ্দেশ্যের সাথে সম্পর্কিত অন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

অধ্যাদেশের ৩৭ ধারায় আরো বলা হয়েছে, রেজল্যুশনের অধীন বীমাকারী বা ক্ষেত্রমত ব্রিজ বীমাকারীকে ঋণ, ইক্যুইটি, সম্পদ ক্রয়, অনুদান অথবা গ্যারান্টি ইস্যুর মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা যাবে। এ ছাড়াও কর্তৃপক্ষ এই অধ্যাদেশের অধীন বীমা পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং প্রদত্ত তহবিলের পুনরুদ্ধার সম্পর্কিত প্রবিধান প্রণয়ন করতে পারবে।

পাওনাদারের সংজ্ঞা সম্পর্কে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, ‘পাওনাদার’ অর্থ পলিসিহোল্ডার বা লাভ ক্ষতির ভিত্তিতে গচ্ছিত রেখেছে এমন ব্যক্তি বা কোম্পানি।