ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সের প্রতারণার অভিযোগ, বিচার চেয়ে ৭ বছর ধরে ঘুরছে ডটকম সোয়েটার
নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতারণা, বিশ্বাস ভঙ্গ ও কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করে গ্রাহক স্বার্থ ক্ষুন্ন করার অভিযোগ উঠেছে ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন ও লস ভাউচার স্বাক্ষরে পরও বীমা দাবির টাকা পরিশোধ না করায় এমন অভিযোগ করা হয়েছে। তবে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে গত ৮ বছর ধরে একের পর এক এমন অভিযোগ করেও কোন সুরাহা পাননি বীমা গ্রাহক ডটকম সোয়েটার। ফলে চরম আর্থিক সংকটে কারখানাটি বন্ধ হয়ে গেছে।
দাবি পরিশোধ নিয়ে যেভাবে জটিলতা সৃষ্টি করা হয়:
ডটকম সোয়েটার বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে ১ম অভিযোগ করে ২০১৪ সালে। গত মাসের ১৩ অক্টোবর আবারও অভিযোগ করেছে বীমা গ্রাহক এ প্রতিষ্ঠানটি।
অভিযোগ ও দাবি সংক্রান্ত নথিপত্র সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ দাবি-দাওয়া আদায়ে উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিকরা কারখানায় ভাঙচুর, রপ্তানির জন্য কার্টন করা মাল ও প্রচুর সুতা লুট করলে ডটকম সোয়েটারের কারাখানায় ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হয়। এ দুর্ঘটনা ঘটে ২০১৩ সালের ১৪ নভেম্বর।
এ ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করার জন্য ডটকম সোয়েটারের বীমাকারী প্রতিষ্ঠান ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স ৩টি জরিপ প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করে। জরিপকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ডটকম সোয়েটারের নামে ইস্যু করা ২টি পলিসির মধ্যে পলিসি নং- এফআইসি/এফজিবি/এফপি-২১/০৫/২০১৩ এর আওতায় ৩ কোটি ৪২ লাখ ২১ হাজার ৭৩৩ টাকা ও পলিসি নং- এফআইসি/এফজিবি/এফপি-২২/০৫/২০১৩ এর আওতায় ১০ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪১ টাকা ক্ষতি নিরুপন করে। এ প্রতিবেদন দেয়া হয় ২১ আগস্ট ২০১৪ সালে।
ডটকম সোয়েটার ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সে পলিসি ২টি করে ২০১৩ সালের ৮ মে। এ ২টি পলিসি করার আগে ডটকম সোয়েটার পলিসি করার প্রস্তাব পত্রে ডটকম সোয়েটারের শর্ত ছিল পলিসির সকল স্বত্ব ডটকম সোয়েটারের সংরক্ষিত থাকবে। এছাড়া প্রিমিয়ার ব্যাংক ও ইউনাটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের সাথে ব্যবসা করার সুবাদে ২টি ব্যাংকের নাম পলিসিতে উল্লেখ থাকবে। ডটকম সোয়েটারের প্রস্তাবনার এ শর্ত মেনেই ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স পলিসি ২টি ইস্যু করে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। উল্লেখ্য, বীমার প্র্যাকটিস অনুসারে বীমা গ্রাহকের প্রস্তাবনার ভিত্তিতে পলিসি ইস্যু করে থাকে বীমা কোম্পানি।
কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানটির অভিযোগ, প্রস্তাবনার শর্ত ভঙ্গ করেছে ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স। ক্ষতিগ্রস্ত এ প্রতিষ্ঠানের মতে, প্রস্তাবনার শর্ত মেনেই পলিসি ইস্যু করা হয়েছে। দাবি পরিশোধ না করার অপকৌশল হিসেবে আইনি জটিলতা সৃষ্টি করতে পলিসিতে উল্লেখিত দুই ব্যাংকেই স্বাক্ষরের জন্য লস ভাউচার ইস্যু করে ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স। একই সাথে ২টি ব্যাংকে ডটকম সোয়েটারের দায়ের তথ্য জানতে চায়। এতে প্রিমিয়ার ব্যাংক বীমা দাবির পুরো টাকা দাবি করে। ফলে বীমা দাবি পরিশোধ নিয়ে আইনগত জটিলতা সৃষ্টি হয়। অথচ বীমা দাবির অংশিদারিত্ব নির্ধারণ করার আইনগত এখতিয়ার ডটকম সোয়েটারের। ব্যাংক কোনভাবেই পলিসি ২টির মালিক নয়। ফলে আইনত প্রিমিয়ার ব্যাংক কখনো বীমা দাবির পুরো টাকার চেক চাইতে পারে না।
উল্লেখ্য, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়ার ব্যাংকের নামে লস ভাউচার ইস্যু করে ডটকম সোয়েটারের দায়-দেনার তথ্য জানতে চায়। প্রিমিয়ার ব্যাংক ৬ নভেম্বর ২০১৪ সালে ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সকে লেখা এক চিঠিতে ডটকম সোয়েটারের দায়-দেনার তথ্য জানায়। ওই চিঠির সংযুক্তিতে স্বাক্ষরিত লস ভাউচার পাঠায়। ব্যাংক ১৮ নভেম্বর অপর এক চিঠিতে বীমা দাবির সমুদয় টাকার চেক প্রিমিয়ার ব্যাংকের নামে ইস্যু করার দাবি জানায়।
বীমা দাবির টাকা আত্মসাৎ করতে চায় ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স- অভিযোগ প্রিমিয়ার ব্যাংকের:
বীমা দাবি পরিশোধ করার বিষয়ে ২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে এক চিঠিতে জানায়, পলিসির শর্ত অনুসারে প্রিমিয়ার ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ও ডটকম সোয়েটার বীমা দাবির হকদার। কিন্তু একদিকে প্রিমিয়ার ব্যাংক বীমা দাবির সমুদয় টাকার চেক চেয়েছে, অপর দিকে ডটকম সোয়েটার ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের নামেও বীমা দাবির সমুদয় টাকার চেক চাওয়ায় সমস্যা ও জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। একইসাথে ওই চিঠিতে বীমা দাবি পরিশোধের বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে পরামর্শও চায় বীমা কোম্পানিটি।
অথচ ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুলেছে প্রিমিয়ার ব্যাংক। বীমা দাবির সমুদয় টাকা প্রিমিয়ার ব্যাংকের নামে চেক দেয়া বিষয়ে ব্যাংকটির অভিযোগ, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও উপদেষ্টা বীমা দাবির অর্থে দাবি প্রতিষ্ঠা করতে পরামর্শ দেন। তাদের পরামর্শ অনুসারে বীমা দাবির অর্থে প্রিমিয়ার ব্যাংকের দাবি প্রতিষ্ঠা করতে বিভিন্ন সময় এসব চিঠি দিয়েছে। গত ৭ অক্টোবর ২০২০ সালে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে লেখা এক চিঠিতে এ অভিযোগ করে প্রিমিয়ার ব্যাংক।
ব্যাংকটির আরো অভিযোগ, প্রিমিয়ার ব্যাংকের অজান্তে ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স ডটকম সোয়েটারকে দাবির বিপুল পরিমাণ টাকা দিয়েছে। এভাবে টাকা দেয়া কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এভাবে টাকা দিয়ে ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স প্রতারণা করেছে। প্রিমিয়ার ব্যাংক বিশ্বাস করে, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স ইচ্ছাকৃতভাবে এই দাবি নিষ্পত্তি করতে চায় না, দাবির অর্থ আত্মসাৎ করতে চায় বলে অভিযোগ করে প্রিমিয়ার ব্যাংক। ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স বীমা আইন ২০১০ এর ৭২ ধারার উপধারা ২ এর লঙ্ঘন করেছে বলেও অভিযোগ ব্যাংকটির। ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেন প্রিমিয়ার ব্যাংকের ডিএমডি ও হেড অব ব্রাঞ্চ শাহেদ সেকেন্দার
আইডিআরএ’র নির্দেশ অমান্য:
বীমা দাবিটি পরিশোধে দফায় দফায় বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) থেকে পরামর্শ ও নির্দেশ দেয়া হলেও তা আমলে নেয়নি ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স। নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে পরামর্শ দেয়া হয়- বীমা আইন ও বীমার প্রচলিত রীতি অনুসারে ব্যবস্থা নিতে। অথচ নিয়ন্ত্রক সংস্থার এসব পরামর্শ ও নির্দেশ ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স সুকৌশলে এড়িয়ে যায়। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে আইন অনুসারে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়ায় সে সুযোগটি কাজে লাগায় ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স। এমনটাই অভিযোগ ডটকম সোয়েটারের।
নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কোম্পানিটি বীমা আইন ও বীমার প্রচলিত রীতি অনুসারে বীমা দাবি পরিশোধে জন্য আইডিআরএ থেকে প্রথম পরামর্শ দেয়া হয় ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ সালে।
ওই চিঠিতে বলা হয়, পলিসিতে যদি বীমা গ্রহীতাদের নামে বীমা অংকের বিভাজন উল্লেখ করা থাকে তবে তা অনুসরণ করে বীমা দাবি পরিশোধ করবে, অথবা বীমা গ্রহীতা যদি আপোষের মাধ্যমে বীমা দাবির বিভাজন করে পরিশোধ করার জন্য অনুরোধ করে, তবে সে মত ব্যবস্থা নিবে, অথবা বন্ধক গ্রহীতা বন্ধক দলিল অনুসরণ করে উভয় বীমা গ্রহীতার সম্মতিতে পরিশোধ করবে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওই চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, “আপনাদের অনুরোধ মোতাবেক, বীমা গ্রহীতা হিসেবে প্রিমিয়ার ব্যাংকের প্রাপ্য দাবির টাকা প্রিমিয়ার ব্যাংকের সম্মতি ব্যতিরেকে অন্য কাউকে পরিশোধ করার জন্য বীমা কোম্পানিকে নির্দেশ প্রদানের সুযোগ নেই। তবে মহামান্য আদালত সার্বিক বিবেচনা করে যেরুপ সিদ্ধান্ত প্রদান করবে সে মতেই ব্যবস্থা গৃহীত হবে।”
তবে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটির এই পরামর্শ বেআইনি ও পক্ষপাতমুলক বলে দাবি করে ডটকম সোয়েটার। বিগত ১ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে আইডিআরএকে লেখা একচিঠিতে এ দাবি করা হয়। ওই চিঠিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার চিঠিটি প্রত্যাখান করার দাবি জানানো হয়।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার উক্ত চিঠিতে, লস ভাউচারে স্বাক্ষরের পর কোনরুপ বিলম্ব না করে দাবির টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য বলেও উল্লেখ করা হয়। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার এসব পরামর্শ কোনটাই আমলে নেয়নি ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স।
ওই চিঠিতে বীমা আইন ও প্রচলিত বীমা রীতি অনুসারে দাবি নিষ্পত্তির জন্য যেমন পরামর্শ দেয়া হয়, তেমনি আদালতের সিদ্ধান্ত মোতাবেক দাবি পরিশোধেরও পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু আইডিআরএ’র পরামর্শ অনুসারে ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স আদালতে কোন মামলা করেনি। অপর দিকে দাবিদারদের মাঝে আপোষের মাধ্যমে বীমা দাবি পরিশোধেরও কোন উদ্যোগ নেয়নি।
পরবর্তীতে বীমা গ্রহীতা ডটকম সোয়েটার বীমা দাবি আদায়ে ২০১৪ সালে উচ্চ আদলতে রীট মামলা দায়ের করেন, রীট পিটিশন নং-১১৭৩৮/২০১৪। এতে উচ্চ আদালত রুল নিশি জারি করে।
তবে, আইডিআরএ’র তৎকালিন নন-লাইফ সদস্য জুবের আহমেদ খান ও ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সের প্রতিনিথি কাজী শাখাওয়াত হোসেনের মধ্যস্থতায় ডটকম সোয়েটার রীট মামলা না চালানোয় উচ্চ আদালত মামলাটি নিষ্পত্তি করে। রীট মামলাটি নিষ্পত্তি হওয়ায় বীম দাবি দ্রুত পরিশোধ করার নির্দেশ দেয় আইডিআরএ। এই নির্দেশ দেয়া হয় গত ২৪ মার্চ ২০১৫ সালে। তবে এ নির্দেশও মানেনি ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স।
এসময়ে ডটকম সোয়েটারকে ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স জানায় তারা (কোম্পানি) আইনজীবীর পরামর্শ অনুসারে ইন্টারপ্লিডার মামলা করবে। কিন্তু সে সময়ে কোম্পানিটি মামলা দায়ের করেনি। ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স ইন্টারপ্লিডার মামলা করার কথা ডটকম সোয়েটারকে জানায় ২০১৫ সালের ৩০ মার্চ এক চিঠিতে।
পরে ২৫ জুলাই ২০১৭ তারিখে বীমা দাবি পরিশোধের জন্য নির্দেশ দিয়ে পত্র দেয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। ওই চিঠিতে, বীমা গ্রাহকের স্বার্থে বীমা কোম্পানি স্ব-উদ্যোগে বীমা আইন ২০১০ এর বিধান ও দেশে প্রচলিত প্রিন্সিপলস অব ইন্স্যুরেন্স মতবাদ অনুসরণ করে বীমা দাবি পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বীমা অংক ও বীমা দাবিতে অংশিদারিত্ব বিভাজন না থাকার ফলে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ওই চিঠিতে দাবি পরিশোধ করে ৩০ দিনের মধ্যে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার নির্দেশ দেয়া হয়। কর্তৃপক্ষের এই নির্দেশও ফেডারেল ইন্সুরেন্স অগ্রাহ্য করে। ২১ আগস্ট ২০১৭ সালে ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে জানায়, আইনগতভাবে দাবিটি নিষ্পত্তি করতে হলে মাননীয় আদালতে একটি ইন্টারপ্লিডার মামলা করতে হবে এবং মামলার রায় ও আদালতের আদেশ মোতাবেক দাবিটি নিষ্পত্তি করতে হবে। যা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, আপনার পরামর্শ মোতাবেক আমরা বীমা দাবিটি নিষ্পত্তির জন্য আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।” কিন্তু ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স দাবিটি পরিশোধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
এতে ১৫ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে দাবি পরিশোধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে ১০ কার্যদিবস সময় দিয়ে শোকজ করে আইডিআরএ। আইডিআএ’র শোকজের জবাব না দিয়ে ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স মাননীয় যুগ্ম জেলা জজ ৪র্থ আদালতে দেওয়ানী (ইন্টারপ্লিডার) মামলা করে। ২৮ নভেম্বর এক চিঠিতে ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স জানায়, কোম্পানি মাননীয় যগ্ম জেলা জজ ৪র্থ আদালতে দেওয়ানী মামলা করেছে। মামলার রায় এবং আদালতের আদেশ অনুযায়ী বীমা দাবি পরিশোধ করা হবে। ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স ইন্টারপ্লিডার মামলা করে ২৩ নভেম্বর ২০১৭ সালে।
তবে উক্ত ইন্টারপ্লিডার মামলার আরজি খারিজের আবেদন করে ডটকম সোয়েটার। এতে ৪র্থ বিজ্ঞ জজ আদালত শুনানী শেষে ডটকম সোয়েটারের আবেদন খারিজ করেন। পরে ডটকম সোয়েটার উচ্চ আদালতে সিভিল রিভিশন মামলা দায়ের করেন। (মামলা নং-৩২৯৩/২০১৮) । উচ্চ আদালত ২৭ আগস্ট ২০১৮ সালে শুনানী শেষে ৪র্থ জেলা জজ আদালতের আদেশ বাতিল করেন। এতে ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স হাইকোর্টের রায়ে সংক্ষুব্ধ হলে সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে নো-অর্ডার প্রদান করে।
অপর দিকে আইডিআরএ’র ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ সালের এক পত্রে ডটকম সোয়েটারকে জানায়, ৬৭৭/২০১৭ নং মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে, মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষর সিদ্ধান্ত প্রদানের সুযোগ নেই।
নথিপত্রের তথ্য অনুসারে, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স ইন্টারপ্লিডার মামলা করার আগে বিভিন্ন সময়ে ডটকম সোয়েটারকে ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা পরিশোধ করে। অথচ ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স বরাবরই আইডিআরএ’র কাছে লেখা চিঠিগুলোতে দাবি করে আইনগত জটিলতার কারণে দাবি পরিশোধ করতে পারছে না।
ডটকম সোয়েটারকে বীমা দাবির টাকা পরিশোধের বিষয়ে গত ৬ অক্টোবর ২০২০ সালে আইডিআরএ’কে লেখা এক চিঠিতে উল্লেখ করে, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ ও ডটকম সোয়েটারের বন্ধকি সম্পত্তি রক্ষায় টাকার জন্য আবেদন করলে ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স উক্ত ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা পরিশোধ করে।
তবে ডটকম সোয়েটারের অভিযোগ, মানবিক কারণে বীমা দাবির টাকা পরিশোধ করার কোন সুযোগ নেই। আইনগতভাবে আমার প্রাপ্য টাকাই ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স পরিশোধ করেছে। বাকি টাকা পরিশোধ না করার অজুহাত হিসেবে কোম্পানিটি আইনগত জটিলতা সৃষ্টি করেছে।
পুনর্বীমা না করার অভিযোগ:
সাধারণ বীমা করপোরেশন ডটকম সোয়েটার লিমিটেডের পুনর্বীমা দাবি অনুমোদন করে ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে। অনুমোদন পত্রের তথ্য অনুসারে, পলিসি নং- এফআইসি/এফজিবি/এফপি-০০২১/০৫/২০১৩ এর আওতায় ৩ কোটি ৪২ লাখ ৩৬ হাজার ৩৪৩ টাকা এবং জরিপ ফি বাবদ ৩ লাখ ৩ হাজার ৬শ’ টাকা পরিশোধ করে। একইসঙ্গে দাবিটির পুনর্বীমার অংশ পরবর্তী ত্রৈমাসিক হিসাব বিবরণীর মাধ্যমে রিকভারি করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়।
কিন্তু এই অনুমোদনে অপর পলিসি নং- এফআইসি/এফজিবি/এফপি-০০২২/০৫/২০১৩ এর পুনর্বীমা দাবি পরিশোধ করা হয়েছে এমন কোন তথ্য নেই। অভিযোগ রয়েছে, এই পলিসিটির পুনর্বীমা করেনি ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। বীমা আইন ২০১০ এর ধারা ১০(১)(ঝ) অনুসারে, যদি কোন বীমা কোম্পানি ‘সন্তোষজনকভাবে পুনঃবীমা ব্যবস্থাকার্য সম্পাদনে ব্যর্থ হন;’ তাহলে ওই বীমা কোম্পানির নিবন্ধন স্থগিত বা বাতিল করতে পারে কর্তৃপক্ষ।
বীমা দাবির অংশিদারিত্ব নির্ধারণ করতে বীমার প্রচলিত প্র্যাকটিস:
বীমা দাবির অংশিদারিত্ব নিয়ে বীমা সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, বীমাকৃত সম্পত্তি একাধিক ব্যাংক বা ফিনান্সিয়াল কোন ইনস্টিটিউটে বন্ধক থাকলে বীমা দাবি পরিশোধের সময় বন্ধকি সম্পত্তিতে ব্যাংকের দায়ের অনুপাত ও পলিসির শর্ত অনুসারে বীমা দাবি পরিশোধ করতে হয়। অথবা ক্ষতিগ্রস্ত সম্পত্তির প্রকৃতি ও ব্যাংকের দায়ের ধরন অনুসারে বীমা দাবির অর্থ বিভাজন করে দাবি পরিশোধ করা হয়।
উদাহরণ দিয়ে তারা বলেন, কোন ব্যাংক হয়তো ভবনের ও কাঁচামালের উপর ঋণ দিয়েছে। দুর্ঘটনায় ভবন ও কাঁচামালের যতটুক ক্ষয়ক্ষতি নিরুপিত হয় সে ব্যাংক তাই পাবে। অপর কোন ব্যাংক তৈরিকৃত মালামালে উপর ঋণ দিয়ে থাকলে সে ব্যাংক তৈরিকৃত মালামালে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের উপর ভিত্তি করে বীমা দাবির টাকার অংশ পাবে।
তারা আরো জানান, এ ধরণের আইনগত জটিলতায় বীমা কোম্পানির উচিত সংশ্লিষ্ট পক্ষদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে অংশিদারীত্ব নির্ধারণ করা। তা সম্ভব না হলে দ্রুত আদালতের স্মরণাপন্ন হওয়া এবং বীমা দাবির অংশীদারিত্ব নির্ধারণ করা। তাদের মতে, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স কেন আদালতের মাধ্যমে বীমা দাবি পরিশোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিয়ে সময় ক্ষেপন করেছে তা খতিয়ে দেখা দরকার।
এ বিষয়ে ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এ এমএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’কে বলেন, ডটকম সোয়েটারের বীমা দাবি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান। আদালতের রায় পেলে সে অনুসারে বীমা দাবি পরিশোধ করা হবে। তিনি বলেন, গত ডিসেম্বরে ডটকম সোয়েটারের মালিককে আইডিআরএ পরামর্শ দিয়েছিল এক মাসের মধ্যে হাইকোর্ট থেকে তার নামে দেয়া ক্লিয়ারেন্সের কাগজটি আনতে, কিন্তু তিনি সেটা আনতে পারেননি।
আইডিআরএ ২০১৪ সালে ইন্টারপ্লিডার মামলা করার পরামর্শ দিয়েছিল এবং ২০১৫ সালের মার্চে আপনাদের আইনজীবী ইন্টারপ্লিডার মামলা করার পরামর্শ দেন, কিন্তু ফেডালে ইন্স্যুরেন্স কেন ২০১৭ সালে মামলা করল- এমন প্রশ্নে মহিউদ্দিন বলেন, উক্ত সালে আমি ফেডারেল ইন্সুরেন্স এর সাথে জড়িত ছিলাম না। বিষয়টি সবারই জানা। আমাদের আইনজীবী আছে, তার সাথে এ বিষয়ে কথা বলব। কথা বলার পরে দেখা যাবে কি করা যায়। তিনি বলেন, পেমেন্ট দেয়ার জন্যই আমরা হাইকোর্টে ইন্টারপ্লিডার মামলা করেছি।
এ বিষয়ে ডটকম সোয়েটার এর ব্যাবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ফয়জুল আহসান’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোনে জানান, বীমা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগসাজসে ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স গ্রাহক স্বার্থ বিরোধী কার্যকলাপ করে যাচ্ছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়ার পরও কর্তৃপক্ষ বীমাকারী কোম্পানির বিপক্ষে কোন আইনগত পদক্ষেপ গ্রহন করতে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ, কর্তৃপক্ষ আইন ২০১০ অনুসারে কর্তৃপক্ষে এ সদস্য নিয়োগ না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে কোন সহযোগিতা পাচ্ছে না।
এসময়ে গ্রাহক স্বার্থ বিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নিবেন বলেও জানান সৈয়দ ফয়জুল আহসান।